সেতুর চেয়ে বেশি কিছু পদ্মা সেতু: পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ওই দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ সেতুটির উদ্বোধন করবেন। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা ফেরিতে যাতায়াত করে। এ সময় যাত্রী ও চালকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। চালু হলে এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু। সেতুটির উপর দিয়ে চলবে বাস ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে দুর্ভোগ কমবে। বহুমুখী এ সেতুর ফলে একদিকে যেমন মানুষের যাতায়াত ও গাড়ি পারাপারকে সহজ করবে অন্যদিকে অর্থনীতিকে করবে গতিশীল। এটির ফলে জিডিপি বাড়বে এক দশমিক তিন থেকে দুই শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গভীরভিত্তির এ সেতুটির ওপরে থাকবে চার লেনের সড়ক নিচে ট্রেন লাইন। সেতুটি উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা পাশেই একটি সমাবেশ করবেন। ২০১৮ সালের পর ওই অঞ্চলে এটাই হবে তার প্রথম সরাসরি জনসভা।

বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করে উদাহরণ তৈরি করেছেন। তবে এ এক্ষেত্রে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হলেও তিনি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। সেতুর নির্মাণকালে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেটাকে মোকাবিলা করে সত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের স্বাক্ষর বহন করে। হাসিনার সময়ে বিশ্ব আরও একবার বাংলাদেশের সক্ষমতা দেখার সুযোগ পেলো। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেটি বারবারই সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে।

এর আগে বিশ্ব ব্যাংক মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে। এরপর অন্য দাতারও একই পথে হাঁটেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। অনেকেই শেখ হাসিনা সমালোচনা শুরু করেন। বলেন তার পক্ষে এ সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এরপর কানাডার আদালত জানায়, পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। যদিও সে সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয়। তারপর নির্মাণ কাজ শুরু হলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যায়। সেতুটি নির্মাণে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় প্রকৌশলীদের। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্যয়।

করোনা মহামারির সময়ে সেতুর নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলতে থাকে। শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছার কারণে এক দিনের জন্যও কাজ বন্ধ থাকেনি। করোনাকে মোকাবিলা করেই কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়। যখন সেতুর কাজ দৃশ্যমান হচ্ছিল তখন একদল গুজব ছড়াতে থাকে যে এটির কাজ চালিয়ে নিতে হলে মানুষের মাথার প্রয়োজন হবে। শেখ হাসিনা শুধু পদ্মা সেতুই নির্মাণ করেননি। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে মেট্রো রেল ও সবচেয়ে বড় টানেলের কাজ। চলতি বছরেই এর কাজ শেষ হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি প্রকল্প, যমুনায় রেল সেতু, পায়রা বন্দর ও বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্কসহ বেশি কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নির্মাণাধীন। তবে এসবের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প সবেচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। এটা শুধু একটি সেতুই নয়, বাংলাদেশের বড় সম্পদ।

সেতুটির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক যোগসূত্র রয়েছে। সেতুটি নির্মাণে ব্যাপক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এটি চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখ যোগ্য হারে বাড়বে। পরিবর্তন হবে অর্থনৈতিক কাঠামো। কৃষিখাতে বড় উন্নয়ন হবে। সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রাজধানীতে কৃষিপণ্য পরিবহনে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় তৈরি করবে। কৃষক তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে। অঞ্চলটিতে নির্মাণ হবে কারখানা।

পদ্মা সেতু হয়ে উঠতে পারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি অংশ। যোগাযোগ ও পরিবহনখাতে বিপ্লবের পাশাপাশি সমৃদ্ধ হবে পর্যটনখাত। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখবে এই সেতু। এই সেতুর চারপাশে গড়ে তোলা হবে রিসোর্ট, হোটেল ও রেস্তোরাঁ যেখানে বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। ফলে বিদেশিদের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি আরও পরিচিত লাভ করবে। পদ্মা সেতু দেশের জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বাড়াবে।

পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জ নিয়ে জয়ী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছেন। সেতুটি বাংলাদেশের অগ্রগতিকে দ্রুত ত্বরান্বিত করবে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে এই সেতু অনন্য ভূমিকা রাখবে। বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। পাশাপাশি জাতির আস্থাকেও ত্বরান্বিত করেছে।

লেখক একজন পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ ও গবেষক

সূত্র: পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি টাইমস।