#
বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজা শততম ম্যাচ খেলে ফেললেন গতকাল। মাশরাফি টস করেছেন ৭১টি ওয়ানডে, ২৮টি টি-টোয়েন্টি ও ১টি টেস্টে।

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার শুরুটা হয়েছিল টেস্ট জয় দিয়ে! কথাটার মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০০৯ সালের বহুল আলোচিত সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবারের মতো দলের নেতৃত্বভার পাওয়া মাশরাফি সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে দলের প্রথম ইনিংসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৯ রানও করেছিলেন নয়ে নেমে। কিন্তু নিজের আসল যে কাজ, সেই বল হাতে নিতেই সপ্তম ওভারে পড়ে গেলেন! ছিটকেই গেলেন। শুধু নেতৃত্ব থেকে নয়, টেস্ট ক্যারিয়ার থেকেও!

ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসান সেই সফরে টেস্ট-ওয়ানডে দুই সিরিজে প্রতিপক্ষকে ধবল ধোলাই করে-টরে দেশে ফিরলেন বিজয়ীর বেশে। মাশরাফি ক্যারিয়ারের সর্বনিম্ন বিন্দুতে পৌঁছালেন ২০১১ বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পেয়ে। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ, অথচ তিনি দর্শক! মাশরাফির ক্যারিয়ারের শেষ অনেকেই দেখে ফেলেছিল সেখানে। সেই মাশরাফির আশ্চর্য প্রত্যাবর্তন হলো। এ এক নেতা মাশরাফির। যার দেখা আসলে মিলল ২০১৪ সালে এসে!

এর মাঝখানে নেতৃত্বভার আরও একবার পেয়েছিলেন। ২০১০-এ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক করা হয়েছিল তাঁকে। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবেও অভিষেক হয়েছিল অবিস্মরণীয় এক জয় দিয়ে, ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপের ডামাডোলে ইংল্যান্ডকে ইংল্যান্ডের মাটিতে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সুখ বেশি দিন কপালে সয় না! ওই বছরের শেষ প্রান্তে এসে মাশরাফি আবারও নেতৃত্ব হারালেন। এবারও হানা দিল চোট। এবং কী আশ্চর্য, এবারও সাকিব নেতৃত্বভার পেয়ে নিউজিল্যান্ডকে ওয়ানডে ধবল-ধোলাই করল! বিশ্বকাপে কে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশকে, সেটাও যেন ঠিক হয়ে গিয়েছিল ওই সিরিজেই!

কিন্তু ফিনিক্স পাখির মতো ছাইভস্ম থেকে জেগে উঠলেন মাশরাফি। জাগিয়ে তুললেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও। ২০১৪ সালে, বাংলাদেশের ক্রিকেটই যখন পথ হারিয়ে টালমাটাল, সতীর্থেরই চোট ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে ফেরাল তাঁকে। মুশফিকুর রহিমের চোটে টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দেওয়া মাশরাফি ওই বছরেই শেষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পূর্ণ নেতৃত্বভার পেলেন। বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস বাকি ছিল। মাশরাফি দলটাকে কত দ্রুতই না গুছিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ট্রেলার দেখাল।

আসল জাদু বিশ্বকাপের পর। একে একে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দল নাকানিচুবানি খেয়ে গেল বাংলাদেশের কাছে। অধিনায়ক থেকে মাশরাফি হয়ে উঠলেন নেতা। রীতিমতো কিংবদন্তির উচ্চতায়! পরে টি-টোয়েন্টি থেকে সরে গেলেন, কিংবা যেতে হলো। এর মধ্যে তো সত্যি সত্যিই নেতা হয়ে উঠলেন ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে। তবে মাশরাফির গল্পটার শেষ হয়নি এখনো। টু বি কন্ডিনিউড…।

বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ অধিনায়ক
মাশরাফি বিন মুর্তজা ১০০
মুশফিকুর রহিম ৯৪
হাবিবুল বাশার ৮৭
সাকিব আল হাসান ৮০
মোহাম্মদ আশরাফুল ৬২
 
মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৫১টি ম্যাচ জিতেছে, হেরেছে ৪৬টি। বাকি তিন ম্যাচ পরিত্যাক্ত
অধিনায়ক মাশরাফি সবচেয়ে বেশিবার জিতেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ১৬ বার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ৯ বার। এর পরই আছে ভারত (৮) ও শ্রীলঙ্কার (৭) বিপক্ষে জয়
মাশরাফির নেতৃত্বে ৫১ জয়ের ৪০টিই ওয়ানডেতে। এর  বিপরীতে ২৯টি ওয়ানডে তিনি হেরেছেন। মাশরাফি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৭১ ম্যাচে
মাশরাফির টি-টোয়েন্টি রেকর্ড অবশ্য এত উজ্জ্বল নয়। ২৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ১০ জয়ের বিপরীতে ১৭ পরাজয়
মাশরাফি ওয়ানডে সবচেয়ে বেশিবার জিতেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে
মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২৪টি সিরিজ জিতেছে
মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের সর্বোচ্চ ছয়ে উঠেছিল
 

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন