রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধানের খেতে সেচের পানি না পেয়ে আবারও এক সাঁওতাল কৃষক বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বিষপানের পর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
বিষ পান করা কৃষকের নাম মুকুল সরেন (৩৫)। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামের গোপাল সরেনের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষ পান করার পরপরই মুকুলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার পাকস্থলি থেকে বিষ বের করা হয়। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
মুকুলের বাড়ি যে গ্রামে, তার পাশের গ্রামের নাম নিমঘটু। এ গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বোরো ধানের জমিতে সেচের পাানি না পেয়ে গত বছরের মার্চে বিষ পান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়। অভিনাথ ও রবি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) যে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপ থেকে পানি নিতেন মুকুল সরেন। মুকুল এবার সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুকুল জানান, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন। কিন্তু, নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাকে পানি দিচ্ছিলেন না। গতকাল দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাকে এক বোতল বিষ দেন এবং এটা বাবুর জমিতে দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই বিষ পান করবেন। তারপরও জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি বিষ পান করেন।
মুকুল আরও জানান, সম্প্রতি বৃষ্টির পর অন্য সব কৃষকের জমিতে একাধিকবার পানি নেওয়া হয়েছে গভীর নলকূপ থেকে। কিন্তু, হাসেম আলী তাকেই শুধু পানি দিচ্ছিলেন না।
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেছেন, শুনেছি, গতকাল দুপুরে মুকুল পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আর আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। তারপর আসলেই বিষ পান করেছেন কি না, তা জানি না।
তিনি আরও বলেন, এবার বোরো চাষ করে মুকুল দুই দিন তার কাছে গিয়েছেন। তিনি পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। একবার ইউপির একজন সদস্যকে তার জমি দেখতে পাঠিয়েছিলাম। তিনি দেখে এসে বলেছেন যে, জমিতে কয়েকদিন পরে পানি দিলেও চলবে।
মুকুলের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানি নিতে আসেনি। এখন সবাই এসেছে একসঙ্গে। আমার ডিপের মুখ একটা, সবাইকে তো একসঙ্গে পানি দিতে পারব না। গতকাল মুকুল এসে বলছে, পানি দিবি না তোকে সাখাওয়াতের মতো (আগের নলকূপ অপারেটর) জেল খাটাবো। তখন তার হাত থেকে একজন বিষের বোতল কেড়ে নেয়। আমি বললাম, পানি দিচ্ছি, তুই জমিতে যা। কিন্তু সে বলছে, তুই আমার জমিতে গিয়ে দে। তারপর সে চলে যায়। বিষ খেয়েছে কি না জানি না।’
এই গভীর নলকূপ থেকে পানি না পেয়ে গত বছর বিষ পান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তার বিরুদ্ধে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর কৃষক লীগ নেতা সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর নিয়োগ দেয় বিএমডিএ।
এবারও কৃষকের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘আবার বিষ খেয়েছে কেন? গত বছরের ঘটনার পর তো ওই ডিপের অপারেটরকে বাদ দিলাম। নতুন অপারেটর নিয়োগ দিলাম। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল? আমি হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে কৃষক মুকুল সরেনের সাথে কথা বলব।’