বিজ্ঞানের শিক্ষক তিনি। সর্বদা হাসি মুখে ক্লাশে পড়াতেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে উপকরণ ও মজার গল্প বলে মূল পাঠে যেতেন। বিদ্যালয়ের সহকর্মী ও শিক্ষাথীদের নিয়ে সব সময় ব্যস্ত সময় কাটাতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কখনো রাগ হতো না। শিক্ষার্থীর বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান দিতেন সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্টেট, চিকিৎসক, জজ, শিক্ষক ও আইনজীবীসহ কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষার্থীর কারিগর তিনি । তাঁর ছাত্র এমপি, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধির গুরুত্বপূর্ন পদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন । দীর্ঘ ৩৯ বছর একই বিদ্যালয়ে সহকারী ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরি করে ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি অবসরে যান তিনি।
এ গল্পের বাস্তব রহস্য হলো , সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বরগুনার বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মোসলেম উদ্দিন অবসর গ্রহনের পর থেকে বিছানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছেন। এক সময় তিনি ছিলেন সকলের প্রিয় শিক্ষক।
সেই শিক্ষকের প্রিয় শিক্ষার্থী বা স্বজনরা কেউ কেউ তাঁর কাছে গেলে সবাইকে স্পষ্ট করে চিনতে পারছেন না। হাত পা থেকেও নেই। মুখে কথা ফুটছে না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। বাচ্চার মত হাউ মাউ করে কাঁদেন। হাজারো শিক্ষার্থীর কারিগর। শিক্ষাগুরু মো. মোসলেম উদ্দিনের এ যেন বেঁচে থাকার আঁকুতি। তিনি অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ বছর বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
অবসর গ্রহনের পর ৫ বছর ধরে বিছানায় শুয়ে আছেন । ২০১৫ সালের মার্চে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকালীণ এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দান কালে হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পর পর দু’বার ব্রেন স্টোকে করে । সেই সাথে শ্বাসকস্টো, ডায়াবেটিকসহ বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। হাঁটতে পারছেন না । স্পস্ট কথা বলতেও পারছেন না। চিকিৎসায় সব কিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়েছেন। ৫ বছর ধরে তিনি বিছানায় পড়ে রয়েছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীন মোহাম্মদ ও মজিবুল হকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থেকে এ পর্যন্ত কোন মতে বেঁচে আছেন। ততটুকু সাধ্য ছিল তা দিয়ে চিকিৎসা চালিয়েছেন। সব কিছু হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব। চিকিৎসা করাতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তবুও এ খবর জানা নেই অনেকের কাছেই। গত শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী তাঁর প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জানাতে উপস্থিত হন তার নিজ বাড়ি সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুরা গ্রামে। এ সময় ঘটনাক্রমে উপস্থিত তার শিক্ষার্থী বেতাগী পৌর শহরের হুমায়ূন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রিয়াজুল কবির বাবু সার্বিক অবস্থা দেখে তার চিকিৎসা তহবিলে তাৎক্ষনিক ৩ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করে। যা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে অনেকেই।
পারিবারিক সূত্র জানায়, পাচঁ সদস্যের পরিবারে যাদের হাল ধরার কথা বড় ছেলে মিজানুর রহমান মিঠু ও ছোট ছেলে মশিউর রহমান মিলন তারাই এখন বেকার। মহামারী করোণার প্রভাবে কর্মসংস্থান হারিয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসার চালাতেই তাদের এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর আবার অসুস্থ বাবার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহণ তাদের পক্ষে অসম্ভাব হয়ে পড়েছে।
এ বিষয় বেতাগী প্রেসক্লাবের আহবায়ক সাইদুল ইসলাম মন্টু ও সদস্য আকন্দ শফিকুল ইসলাম বলেন,‘ আমাদের সকলের প্রিয় মোসলেম উদ্দিন স্যারের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। অথচ জীবন সায়াহ্নে এভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে থাকবে এটা দুঃখজনক ব্যাপার।’ তারা আরো বলেন,‘ তাঁর ছাত্র-ছাত্রীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত।’
সকলের জনপ্রিয় এ শিক্ষা গুরু জীবন সায়াহ্নে এসে চিকিৎসার অভাবে বিছানায় শুয়ে ছটফট করছেন। মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম তার জন্য দোয়া ও মানবিক সহায়তা চেয়েছেন। দেশে-প্রবাসে বিভিন্নস্থানে তার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, গুনগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীরা একটু পাশে দাঁড়ালে হয়ত তিনি আগামী দিনগুলোতে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবেন। প্রয়োজনে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের ০১৭৩৬৪৬০৮১৩ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা যেতে পারে।