দীর্ঘ ৪০ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে অবশেষে ফিরে গেলেন হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকার ছেলের হাতে নির্যাতিত সেই আলোচিত বৃদ্ধ মা। মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের থেকে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল নিজেই ওই বৃদ্ধা মা’কে নিয়ে হরিপুর নিজ বাড়িতে রওনা দেন।
এরপর সন্ধ্যা ৭টায় হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকায় পৌঁছে সকলের উপস্থিত বৃদ্ধা মা’কে তুলে দেন তিনি।
এর আগে, বৃদ্ধ মা’কে হাসপাতাল থেকে বিদায় জানানোর সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য রোগীরা। এটা দেখে এসময় বৃদ্ধা মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা জানান, একজন নির্যাতিত বৃদ্ধ মা’কে দীর্ঘদিন সেবা দিতে পেরে সন্তান হিসেবে খুবই ভালো লাগছে। সুস্থ হয়ে বৃদ্ধ মা চলে যাওয়াটা খুব খারাপ লাগছে। প্রতি সন্তানের পিতা-মাতার শেষ বয়সে দায়িত্ব পালন করা কর্তব্য।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগী মহসিনা জানান, দীর্ঘ দিন চিকিৎসায় কত লোকজন যে দেখতে এসেছে তা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। বাকি জীবনটুকু সুস্থভাবে কাটুক এই দোয়া করি।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, বৃদ্ধা মা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। যেহেতু বৃদ্ধা মা’কে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি, সুস্থ করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার নিজেই। তাই বৃদ্ধ মা’কে নিয়ে হরিপুর ডাঙ্গীপাড়া এলাকায় রওনা দিয়েছি।
বৃদ্ধ মায়ের জন্য ঔষধ, খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেয়া হয়েছে। তার সুস্থ হওয়ার পেছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সংবাদকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সন্তানের দ্বারা একজন মা আহত হবেন, এটা আমরা সমাজের আশা করি না। একজন গর্ভধারিণী মায়ের সন্তান জন্মদানের কষ্ট আমরা কখনো অনুধাবন করি না। এই নির্যাতিত মা’কে দেখে সমাজের প্রতিটি সন্তান যেন শিক্ষা গ্রহণ করে, মাকে আঘাত করার অপরাধ কতটা অমানবিক। আসুন আমরা মানবিক হয়ে সমাজের সেবা করি।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, বৃদ্ধা মা নিরাপদে থাকার জন্য ইতিমধ্যে একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে আরো সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট দুপুরে ছেলের বউয়ের কাছে ভাত চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শতর্বষী তসলিমা খাতুন। এ কথা ছেলে দবির উদ্দিন জানতে পেরে লাঠি দিয়ে মা’কে মারধর করেন। লাঠির আঘাতে তসলিমার বাম চোখ থেঁতলে যায়। পরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ওই ‘মা’ কে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ‘মা’ কে নির্যাতনের অভিযোগে ছেলে দবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বৃদ্ধা ‘মা’ তার সন্তানের প্রতি কোন অভিযোগ নেই জানায় ও ছেলেকে দেখার আকুতি করলে আদালত নির্যাতনকারী ছেলে দবির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেন।