বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের মরাগাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না। তারা এখন দেশ ছেড়ে বিদেশিদের কাছে কথায় কথায় নালিশ করছে। এ কারণে তারা এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি’র নেতা নেই, নেতৃত্ব আসবে কোথা থেকে এমন প্রশ্নতুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘টেমস নদীর ওপার থেকে নির্দেশ আসে আর পুতুল ফখরুল নাচে। বিএনপি’র অস্থিত্ব কোথায়? তাদের দুই উইকেট পড়ে গেছে। আরও যাবে। অস্তিত্ব সংকটে আছে বিএনপি। বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি কোথাও কোন উন্নয়ন করেনি। দিয়েছে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট, হাওয়া ভবন। ‘আর হাওয়া ভবন মানে খাওয়া ভবন’।
আওয়ামী লীগে কোন হাওয়া ভবন নেই। দুর্নীতিতে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন বিএনপি। অথচ তারা দুর্নীতির কথা বলে। ‘ভুতের মুখে রাম নাম’। যনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে তারা। আন্দোলন ও নির্বাচনেও ব্যর্থ হয়েছে। এখন বসে বসে গলাবাচি আর প্রেস ব্রিফিং করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঝড়, দূর্যোগ, অন্ধকারে লড়াই করে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত আর জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন শেখ হাসিনা।
শুধু বাংলাদেশ নয়, তিনি সারা বিশ্বে প্রসংশিত। বিশ্বের তিন জন সৎ রাস্ট্রনায়কের মধ্যে শেখ হাসিনা একজন, চার জন পরিশ্রমী নেতার মধ্যে তিনি একজন, ১০ জন প্রভাবশালী রাস্ট্রনায়কের একজন শেখ হাসিনা। ৪৪ বছরের জনপ্রিয় রাস্ট্রনায়ক, জনবান্ধব সরকার, সাহসি রাজনীতিবীদ, সফল কুটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা।
উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশকে। তিনি ক্ষমতায় আছেন বলে জিডিবিতে বাংলাদেশ সবার শীর্ষে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব ব্যাংক যখন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করে চলে গিয়েছিলেন তখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষনা দেন প্রধানমন্ত্রী। আর তা আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ফোর লেন নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্টের অভাব হবে না দক্ষিণাঞ্চলে। শেখ হাসিনা আসে বলেই সব পাচ্ছেন। তাই আমি চ্যালেঞ্চ করে বলছি বরিশালে বিএনপি’র দৃশ্যমান কোন কাজ নেই। তারা কি দেখিয়ে বলবে আমাদের পক্ষে রায় দাও।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০ বার হত্যা চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। আওয়ামী লীগকে নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার উৎখাতের পায়তারা করছে তারা। চক্রান্তে চোরাগলি বেছে নিয়েছে বিএনপি। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ডে সুন্দর ছবি দিয়ে নেতো হওয়া যাবে না। নেতা হতে হলে মানুষের হৃদয়, মানুষের ভালোবাসাকে জয় করতে হবে। সুবিধাবাদী খারাপ লোকদের আওয়ামী লীগে দরকার নেই। এরা উন্নয়ন অর্জন উইপোঁকার মত খেয়ে ফলবে।
আওয়ামী লীগে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজী, মাদক, ভূমিদস্যু ও দখলদারদের দরকার নেই। শীতের অতিথি পাখি, মৌসুমী পাখিদের দরকার নেই। আমরা মৃত্যুর মিছিলে দাড়িয়ে বিজয়ের জয়গান গাই, ধ্বংস স্তুপে দাড়িয়ে দেশের পতাকা উড়াই, জনগণই আমাদের ক্ষমতার উৎস।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে ত্যাগী কর্মীদের বাাঁচাতে হবে, ত্যাগী নেতাদের বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে হবে। তাই দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের সভাপতিত্বে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু-এমপি। বিশেষ বক্তা ছিলেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির মন্ত্রী মর্যাদার আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি।
এছাড়া বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ মল্লিক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান, বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আর সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন।
সম্মেলনে অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্ট্রার বিপ্লব বরুয়া, সদস্য গোলাম রাব্বানি চিনু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহীদ জননী শাহানারা আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন, সদর আসনের সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পরবর্তীতে বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু। পরে ৭১’র শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পরবর্তীতে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন শেষে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তাছাড়া দুপুর আড়াইটায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হলে বিকেল ৩টায় নগরীর বরিশাল ক্লাবে কাউন্সিল শুরু হয়। এতে ৩৭১ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।