‘ওয়াও, হোয়াট আ গোল !’ বলটি জালে জড়াতেই পাশ থেকে শোনা গেল এমন উচ্ছ্বাস। আর গ্যালারি থেকে ভেসে আসছে দর্শকদের গর্জন। সবার চোখে-মুখে কী এক ঘোরলাগা অবিশ্বাস, সত্যিই গোল তো! আসলে এমন দুর্দান্ত গোল দেখার পর চোখ কচলাতেই হয়। তার ওপর দুর্দান্ত গোলটি যদি করেন বাংলাদেশি কোন ফরোয়ার্ড! সবে কুড়িতে পা রাখা ফরোয়ার্ডের নাম মাহবুবুর রহমান সুফিল।
ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পাওয়ার ম্যাচে কেমন ছিল সুফিলের পা থেকে আসা গোলটি? বদলি ইমন বাবুর লব বক্সের ডান প্রান্তে পড়তেই গতিতে ভুটানিজ ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে ভলি, বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে। বাংলাদেশের স্ট্রাইকাররা বল প্রথম দফায় নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরও ঠিকঠাক পোস্টে রাখতে না পারার বদনাম আছে। সেখানে সুফিল প্রথম স্পর্শেই বল সরাসরি জড়িয়ে দিলেন জালে! তাও একটু দুরূহ কোণ থেকে। দর্শকদের চোখেমুখে বিস্ময়টা এ কারণেই।
শুধু গোলই করেননি মৌলভীবাজারের তরুণ, অ্যাটাকিং থার্ডে বল দখলে রাখা, দুর্দান্ত গতির সঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণ ও সর্বোপরি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ওপর আতঙ্ক ছড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে স্ট্রাইকার চেয়ে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, তা আপাতত রদ করতেই পারেন। তা না করলেও তিনি যে সুফিলে মুগ্ধ, ম্যাচ শেষে তা গর্ব করেই বলেছেন, ‘ব্যতিক্রম ফুটবল খেলেছে। প্রচুর পরিশ্রম করেছে মাঠে। আর গোলটাও ছিল দুর্দান্ত।’
বলতে পারেন এক ম্যাচে দুর্দান্ত এক গোল করেছে, তা নিয়েই এত প্রশংসা! জাতীয় দলের জার্সিতে সবে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেছেন সুফিল। আর দুই ম্যাচেই গোল। বাংলাদেশের স্ট্রাইকাররা টানা দুই ম্যাচে শেষ কবে গোল করেছেন, তা মনে করাই কঠিন। তাও আবার মাত্র কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে উঠতে থাকা ক্যারিয়ারে।
মার্চে লাওসের বিপক্ষে সুফিলের গায়ে জাতীয় দলের জার্সি তুলে দিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ওর্ড। ভিয়েনতিয়েনের সে ম্যাচে ২-১ গোলে হারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৯২ মিনিটে ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির বদলি নামা অভিষিক্ত সুফিল। নতুন জার্সির ঘ্রাণ গায়ে লেগে থাকতে থাকতে গোল করে বাংলাদেশকে ফিরিয়েছিলেন সমতায়।
নিশ্চয় ভুলে যাওয়ার কথা নয় কদিন আগে শেষ হওয়া এশিয়ান গেমসের কথা। সেখানেও সুফিল করেছিলেন এক গোল। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন গত মৌসুমে আরামবাগের জার্সিতে খেলা তরুণ ফরোয়ার্ড।
সিনিয়র বা অনূর্ধ্ব ২৩ দল ছাড়াও বয়সভিত্তিক অন্য জাতীয় দলেও তাঁর পায়ে গোল দেখা গেছে নিয়মিতই। গত বছর ভুটানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে ভারতের বিপক্ষে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ৪-৩ গোলে ম্যাচ জয়ের কথাও নিশ্চয়ই ভোলেননি ? ওই ম্যাচে সমতাসূচক গোলটি এসেছিল তাঁর হেডেই। তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাইপর্বেও তিন ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন ৩টি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়ের ম্যাচে জোড়া গোল এসেছিল সুফিলের পা থেকে। আর মালদ্বীপের বিপক্ষে তাঁর একমাত্র গোলেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
এবার সেই সুফিলে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।