সুপ্রিম কোর্টের সংকট খুব শিগগির মিটবে: ভারতের প্রধান বিচারপতি

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চার সিনিয়র বিচারপতির পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কাজ কর্ম নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার পর বিচার বিভাগকে ঘিরে যে অভূতপূর্ব সংকট তৈরি হয়েছে, তা শিগগির মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছ শীর্ষ আদালতের বার কাউন্সিল (বিসিআই)। রবিবার সন্ধ্যায় দেশটির প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের সঙ্গে এই বার কাউন্সিলের সাত সদস্যের এক প্রতিনিধি দলের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়।

বার কাউন্সিলের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন, বিসিআই’এর চেয়ারম্যান মনন মিশ্র। দিল্লিতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে দুই পক্ষের মধ্যে সেই বৈঠক চলে প্রায় ৫০ মিনিট ধরে। এর আগে ওই প্রতিনিধি দলের তরফে শীর্ষ আদালতের চার বিদ্রোহী সিনিয়র বিচারপতির মধ্যে ক্যুরিয়েন জোসেফ, জে.চেলারামেশ্বর এবং মদন লোকুর’এর সাথেও বৈঠক করেন। পরে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মনন মিশ্র সাংবাদিকদের জানান ‘খুবই অনুকূল পরিবেশের মধ্যে প্রধান বিচারপতির সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সব সমস্যাই মিটে যাবে। বার কাউন্সিলের ভূমিকা খুবই সীমাবদ্ধ। বিচারপতিরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন কোন সমস্যাই থাকবে না’।

বার কাউন্সিলের সভাপতি বিকাশ সিং-ও আলাদা করে সাক্ষাত করেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের সঙ্গে। প্রায় ১৫ মিনিটের সাক্ষাতে প্রধান বিচারপতি ও শীর্ষ আদালতের সিনিয়র বিচারপতিদের মধ্যে মনোমালিন্য সম্বলিত একটি প্রস্তাব তুলে দেন দীপক মিশ্রকে।
পরে বিকাশ সিং জানান ‘আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে একটি প্রস্তাবনা তুলে দিই। তিনি আমাদের কথা দিয়েছেন যে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং যত শিগগিরি সম্ভব সুপ্রিম কোর্টে অনুকূল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবেন।’

এদিকে মামলা বন্টনের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত ও স্বচ্ছ পদ্ধতি মেনে চলার দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে খোলা চিঠি দিয়েছেন দেশটির চার সাবেক বিচারপতি। এই চার সাবেক বিচারপতির মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টের বাকি তিনজন দিল্লি, মাদ্রাজ ও মুম্বাইয় হাইকোর্টের। চিঠিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা লেখেন ‘যুক্তিসঙ্গত ভাবে এবং সঠিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মামলা বিলি-বন্টন হলেই সুপ্রিম কোর্টের বিচার ব্যবস্থায় যে কোন ক্ষমতায় অপব্যাবহার হচ্ছে না-এই বিষয়টি মানুষকে আশ্বস্ত করা যাবে’।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবারই সংবাদ সম্মেলন করে দেশের বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন শীর্ষ আদালতের চার সিনিয়র বিচারপতি ক্যুরিয়েন জোসেফ, জে.চেলারামেশ্বর, রঞ্জন গগৈ এবং দমন লোকুর। চার বিচারপতির অভিযোগ ছিল বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় অনেক ফাঁক রয়েছে। পুরো ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করান প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রকে। বিচারপতিদের অভিযোগ প্রধান বিচারপতি যেভাবে আদালত চালাচ্ছেন তা ভারতের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। কারণ তিনি তাঁর ব্যক্তিগত মর্জিমাফিক বিভিন্ন বেঞ্চে মামলা পাঠাচ্ছেন। চার বিচারপতির এভাবে প্রকাশ্যে বিদ্রোহে সোরগোল পড়ে যায় পুরো ভারত। ঘটনায় সারা ভারতেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিষয়টি একদিকে ভারতের প্রধান বিচারপতি ও গোটা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তির। তেমনি অস্বস্তিতে পড়ে সরকার পক্ষও। বিচারবিভাগকে ঘিরে এই সংকট তৈরি হওয়ার পর দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারও উদ্যোগী হয় শিগগির এই সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে।