দীপক রায়, দাকোপ(খুলনা) ঃ বুধবার দিবাগত রাত্রে সুপার সাইক্লোন আম্ফান
সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ উপজেলায় আঘাত হানে। একটানা প্রায় চার ঘন্টা
ঝড়ের তান্ডবে এলাকার ঘরবাড়ি ও ওয়াপদার বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বইতে থাকে। নদীর
পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়েও ২-৩ ফিট বৃদ্ধি পায়, ভাটাতেও নদীর পানি
কমে নাই। ব্যাপক গনসচেতনতা এবং উপজেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় প্রায়
৭০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য
দাকোপের ১০৮ টি সাইক্লোন শেল্টার ও ৬৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের
মাধ্যমে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ টি কার্যকরী কমিটি গঠন করে।
আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং তিন বেলা
খাবার, ইফতারি এবং সেহেরির ব্যবস্থা করা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার
জন্য ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনীধিরা স্ব-স্ব ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র
পরিদর্শন ও ব্যবস্থাপনায় অংশ গ্রহন করেন। উপজেলা কন্ট্রোলরুম থেকে
প্রতিনিয়ত প্রতিটি ইউনিয়ন ও চালনা পৌরসভার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের
সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে
প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে যান এবং সেখানকার প্রস্তুতি নিজের চোখে
অবলোকন করেন।
বুধবার রাতে আম্ফান আঘাত করলে এলাকার বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা সহ অন্যান্য
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও একপর্যায়ে বন্ধ
হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান,
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের
বটবুনিয়া বাজার, পানখালী সহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে যান
এবং সেখানকার ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন।
উপজেলা পরিষদের এসওএস ফরম অনুপাতে এলাকায় এক হাজার টি ঘরবাড়ি
বিধ্বস্ত হয়। বটবুনিয়া বাজার এবং চালনা পৌরসভার গৌঢ়কাঠি এলাকার
প্রায় ২.৫ কি:মি: ওয়াপদা বেড়ি বাঁধ ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। প্রায় পাঁচশত
পঁচাশি হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়। ২ শত গবাদি পশু আহত হয়। প্রায় ৬
শতাধিক গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। এছাড়াও সরেজমিনে দেখা যায় বানীশান্তা
পতিতা পল্লি জোয়ারের পানিতে আংশিক নিমজ্জিত হয় এবং ৫৫ টি
বাসগৃহ ভেঙ্গে পড়ে। ওয়াপদার বাইরের প্রায় একশত হেক্টর জমির চিংড়ি ঘের
ভেসে যায়।
বটবুনিয়া বাজারের সীমান্ত সরদার, দীপন রায় ও চঞ্চন গাইন বলেন রাত্রে ঝড়ের
সাথে সাথে ঢাকী নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। একদিকে ঘরবাড়ি ভাঙ্গতে শুরু
করেছে অন্যদিকে পানি ওভার ফ্লো হয়ে বেড়ি বাঁধ ছাপিয়ে ভিতরে প্রবেশ
করছে। আমরা এলাকাবাসীরা সারারাত ওয়াপদায় মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষার কাজ
করেছি।
কৈলাশগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনে প্রায় ৬ শতাধিক মানুষ বুধবার রাত্রে
আশ্রয় নেয়। তাদের একজন হরিণটানা গ্রামের নান্টু জোয়ারদার বলেন,
সারাদিন বৃষ্টি হুয়ে পোষায়নি, সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি আর কি ঝড়,
আরেকটু হলি মনে হয় দালান ভাংগে যাতো। এখন বাড়ি যাচ্ছি শোনলাম
বাড়ির বড় আমগাছটা ভাঙ্গে পুড়েছে। এবার আর ছালে পুলের আম খাবা
লাগবেনা, সব আম ঝুরে গেছে।
দাকোপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সমস্ত ক্ষতিগ্রস্থ
এলাকা ঘুরে দেখেছি, ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতির পরিমান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যত
শিঘ্র সম্ভব ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারি সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে আজ সকালে এলাকার সমস্ত বিপদসংকেত পতাকা নামিয়ে নেওয়া
হয়েছে, আশ্রয় কেন্দ্র থেকে সকলেই বাড়ি ফিরেছে। আম্ফানের ভয় আর নেই
কিন্তু রয়ে গেছে নিরব ঘাতক করোনা ভাইরাসের ভয়।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com