সুন্দরবন ভ্রমণে খরচ বাড়লো

:
: ২ years ago

সুন্দরবনে ভ্রমণ মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে ভ্রমণের রাজস্ব বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বনবিভাগ। দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে ওইদিন থেকেই তা কার্যকর করেছে সংস্থাটি।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভ্রমণ-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব বাড়ানো হয়েছে। ভ্রমণ মৌসুমের শেষদিকে এসে রাজস্ব বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন ট্যুর অপারেটররা। তবে এই রাজস্ব বৃদ্ধি শুধু ট্যুর অপারেটরদের জন্য নয়, বনজীবীরাও পড়েছেন এর আওতায়।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক এম নাজমুল আলম ডেভিড অভিযোগ করে বলেন, অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের মৌসুম। এই সময়ের বাইরে সুন্দরবনে প্রবেশ করা কঠিন ব্যাপার। বিরূপ আবহাওয়া ও নদ-নদী উত্তাল থাকায় নৌযান নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ কারণে ওই ছয়মাসই সুন্দরবন ভ্রমণের মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু কোনো কিছু না জানিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণের মূল মৌসুমের মাঝপথে রাজস্ব বাড়ানো হয়েছে। এতে তারা বিপাকে পড়েছেন।

তিনি বলেন, ‘একদিকে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে রাজস্ব বৃদ্ধি তাদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। অধিকাংশ ট্যুর অপারেটরদের অগ্রিম ট্যুর বুকিং রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন রাজস্ব ধার্য করায় তাদের লোকসানের বোঝা বইতে হবে।’

নতুন ওই রাজস্ব ধার্য করায় ট্যুর অপারেটরগুলো কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে বলে স্বীকার করছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারাও। তবে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে তাদের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

বন কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ধার্যকৃত রাজস্ব শুধু ট্যুরিজম নয় সুন্দরবন থেকে মাছ, কাঁকড়া, মধু আহরণসহ সব ক্ষেত্রেই আরোপ করা হয়েছে। মাঝপথে নয় বরং ট্যুরিজম মৌসুমের শেষ সময়ের দিকেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

নতুন প্রজ্ঞাপনে ধার্য করা রাজস্বের তালিকা থেকে দেখা গেছে, আগে সুন্দরবন বা এর আওতার মধ্যে হেলিকপ্টার বা সি-প্লেন অবতরণের জন্য কোনো রাজস্ব ধার্য ছিল না। নতুন তালিকায় নিবন্ধন করা হেলিকপ্টার বা সি-প্লেনের ক্ষেত্রে রাজস্ব ধার্য করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আর নিবন্ধন না থাকলে দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা।

১০০ ফুটের ঊর্ধ্বের জলযানের ক্ষেত্রে নিবন্ধন থাকলে এক হাজার ও নিবন্ধন না থাকলে চার হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নতুন তালিকায় সেটি করা হয়েছে দেড় হাজার ও ছয় হাজার টাকা। একইভাবে সুন্দরবন ভ্রমণের প্রতিটি নৌযানের ক্ষেত্রেই আগের তুলনায় রাজস্ব বাড়ানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

অভয়ারণ্যের বাইরে জনপ্রতি পর্যটকের প্রতিদিনের রাজস্ব ছিল ৭০ টাকা, সেখানে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০ টাকা। অভয়ারণ্য এলাকায় আগে যেখানে একজন পর্যটক ১৫০ টাকায় একদিন থাকতে পারতেন সেখানে এখন লাগবে ৩০০ টাকা।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন হওয়ায় সুন্দরবন বাংলাদেশসহ বিশ্বের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকষণের স্থান। এই বন সম্পূর্ণ আলাদা, প্রকৃতিগতভাবেও এর অবস্থান ভিন্ন। এসব কারণে ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের অন্যতম একটি স্থান হলো সুন্দরবন।

কয়েকজন ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ট্যুর অপারেটররা সুন্দরবনের পর্যটনখাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছেন। তবে করোনার কারণে গত দুইবছর তারা ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বছরও পযটন মৌসুম শুরু হওয়ার পরে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলেসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনার নতুন ধরনের (ওমিক্রন) ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে অনেক পর্যটক ট্যুর বুকিং বাতিল করেছেন। এতেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ট্যুর অপারেটররা।

তারা বলছেন, সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সাধারণত আগ থেকেই বুকিং দিয়ে রাখেন পর্যটকরা। সেক্ষেত্রে ভাড়াসহ সবকিছু আগ থেকেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য নতুনভাবে রাজস্ব ধার্য করায় অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে ট্যুর অপারেটরদের। এতে নতুন করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।

সুন্দরবনে ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক এম নাজমুল আজম বলেন, ট্যুর অপারেটররা সাধারণত মৌসুম শুরু হওয়ার আগে বনের রাজস্বসহ সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্যুর প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেন। সহসা ওই প্যাকেজ পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে বনবিভাগের রাজস্ব বৃদ্ধি ট্যুর অপারেটরদের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করছে।

তিনি বলেন, এর আগে বনবিভাগ রাজস্বের হার বৃদ্ধি ও তা বাস্তবায়নের আগে ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করতো। কিন্তু এবার রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা করা হয়নি। এ কারণেই মাঝপথে ট্যুর অপারেটরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, নতুন রাজস্ব তালিকা প্রণয়নের প্রায় ১০ বছর আগে রাজস্ব তালিকা ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকার ও সংশ্লিষ্টরা রাজস্ব বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত মনে করেছেন বলেই নতুন রাজস্ব হার বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়ছে। এতে ট্যুর অপারেটররা হয়তো কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তবে তা সাময়িক। কারণ সুন্দরবন ভ্রমণ মৌসুম এখন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।