সুন্দরবনের ছয় কুখ্যাত জলদস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৫৪জন অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ র‌্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

 

ঐশ্বর্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর জীব বৈচিত্রের স্বমহিমায় বিশাল সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার উপকূলবর্তী মানুষ প্রতি নিয়তই জলদস্যুদের আক্রমনের শিকার হয়ে থাকে। সুন্দরবন সহ বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় বনদস্যু, জলদস্যুদের দমনের লক্ষ্যে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে, যার প্রধান সমন্বয়কারী “মহাপরিচালক র‌্যাব ফোর্সেস”। র‌্যাব সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু ও বনদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর হতে এ পর্যন্ত সফল অভিযানে ৫৭২ জন জলদস্যু/বনদস্যু গ্রেফতার, ১,৫৪২টি অস্ত্র, ৩৩,১৮৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার আইনের আওতায় নিয়ে আসে। ফলে সুন্দরবন কেন্দ্রিক বনদস্যু/জলদস্যু বাহিনীর অপতৎপরতা বহুলাংশে কমে এসেছে। সাধারনত ইলিশ ও শুটকি মৌসুমকে কেন্দ্র করে জলদস্যু/ডাকাতরা তাদের ডাকাতি, জেলে অপহরণ এবং অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সে কারনে ইলিশ মাছ আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুমে সুন্দরবন এলাকায় যাতে মৎস্য আহরনকারী জেলেদের জলদস্যু কর্তৃক অপহরণ/ডাকাতির কবলে না পড়তে হয় সে লক্ষ্যে র‌্যাব সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু দমনে বিশেষ আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করেছে।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশকে জঙ্গি, মাদক ও জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত করতে হবে। আর এ প্রত্যয়ে র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। শিগগিরই সুন্দরবনকে জলদস্যু ও বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে যুবসমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি তিন হাজারের অধিক মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে এর আগে বিভিন্ন সময় র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু ও বনদস্যু বাহিনীর ৫৮ জনকে পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. মোজাম্মেল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, নৌ পুলিশের ডিআইজি শেখ মো. মারুফ হাসান, র‍্যাব-৮-এর অধিনায়ক আতিকা ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান ও খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান।

র‍্যাব-৬-এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাবের এই কঠোর তৎপরতার কারনে (এখন পর্যন্ত বিগত ২৩ মাসে সর্বমোট ২০টি বাহিনীর ২১৭ জন জলদস্যু, ৩৪৬টি অস্ত্র ও ১৭,৮৬৯ রাউন্ড গোলাবারুদ সহ র‌্যাবের নিকট আতœসমর্পণ করে) এ ঘটনা সমুহের ফলে সুন্দরবনে সক্রিয় অন্যান্য জলদস্যু বাহিনী সমূহের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি সুন্দরবনের জলদস্যু বাহিনী (ক) দাদা ভাই বাহিনী, (২) আমির আলী বাহিনী, (৩) হান্নান বাহিনী, (৪) সূর্য্য বাহিনী, (৫) ছোট সামসু বাহিনী এবং (৬) মুন্না বাহিনী উৎসাহিত হয়ে একই পথ অনুসরন করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।

“দাদা ভাই বাহিনী”ঃ   দাদা ভাই বাহিনী খুলনা জেলার দাকোপ, কয়রা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর এবং  বাগেরহাট জেলার মোংলা থানাধীন সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মোংলা, শ্যালাগাং, হারবাড়িয়া, ভদ্রা, পশুর নদী, আন্ধার মানিক নদী, বাটলো নদী, কলাগাছি নদী, আাড়পাংগাশিয়া নদী, কুমারী নদী, শিবসা নদীসহ বিস্তীর্ণ এলাকা এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং ভয়ংকর একটি জলদস্যু বাহিনী। যারা এই অঞ্চলের আতংক নামে পরিচিত ছিল। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১৩। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সশস্ত্র এবং সবার কাছেই দেশী বিদেশী উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে এবং সন্নিহিত অঞ্চলের বনজীবি ও জলজীবি সাধারণ মানুষেরা তাদের প্রধান লক্ষ্য। সাধারন জেলে ,বাওয়ালী ও মাওয়ালীদের অপহরণ করে  মুক্তিপান আদায় করে থাকে। দলনেতা মোঃ জয়নাল আবেদীন @ রাজন @ দাদা ভাই (৩৮) ২০০৯ সালে থেকে এ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা সহ বিবিধ মামলা রয়েছে।

“হান্নান বাহিনীঃ এই বাহিনী পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ সংলগ্ন মংলা, হারবাড়িয়া, ভদ্রা এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় অপর একটি ভয়ংকর জলদস্যু বাহিনী। তাদের সদস্য সংখ্যা ০৮ পশুর নদী সংলগ্ন বিভিন্ন খাল ও চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদী সংলগ্ন অঞ্চলের বনজীবি ও জলজীবি সাধারণ জেলেদের অপহরন ও মুক্তিপন আদায় করে তারা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। মোঃ হান্নান শেখ (৪৫) ২০১১ সাল থেকে এ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, জেলে, কাকড়া জেলে, মৌওয়ালী, বাওয়ালীদের সুন্দরবনে ঢুকতে তাদের কার্ড নিতে বাধ্য করা এবং বেপরোয়া মারপিট করে আতংক সৃষ্টি করে টাকা আদায়, লুটপাট ও ডাকাতি করাই ছিল তাদের কাজ। অপহরণ, চাঁদাবাজী, ডাকাতিসহ তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে।

“আমির আলী বাহিনীঃ বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবন অঞ্চলে অন্যান্য দুর্ধর্ষ জলদস্যু বাহিনীর মধ্যে “আমির আলী বাহিনী” অন্যতম। এই বাহিনী গত ২০১৬ সালের শুরুর দিক থেকে দক্ষিন-পশ্চিম সুন্দরবনের আড় পাঙ্গাশিয়া কালিঞ্চি, মাহামুদানদী কলাগাছিয়া ও কাটেশ্বর খালের বিভিন্ন যায়গায় জলদস্যুতা করে বেড়ায়। সাধারন জেলে ,বাওয়ালী ও মাওয়ালীদের অপহরণ করে  মুক্তিপান আদায় করে থাকে। এই বাহিনীর মোট সদস্য ০৭ (সাত) জন। উক্ত বাহিনীর সদস্যদের নামে/বেনামে জলদস্যুতা ও ডাকাতির বিভিন্ন মামলা বিদ্যমান। দলনেতা আমিরুল ইসলাম (৩৫) ২০১৬ সাল হতে উক্ত বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে।

 

“সূর্য্য বাহিনী” সম্পর্কে জানা যায়, এই বাহিনী পূর্ব সুন্দরবনের মংলা, হারবাড়িয়া, ভদ্রা এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সবচেয়ে দূধর্ষ এবং পুরাতন অপর একটি জলদস্যু বাহিনী। পশুর নদী সংলগ্ন বিভিন্ন খাল ও চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালাগাং সংলগ্ন অঞ্চলের বনজীবি ও জলজীবি সাধারণ মানুষরা তাদের প্রধান লক্ষ্য। মোঃ আবুল হোসেন(৩৮), পিতাঃ মৃত জহির উদ্দিন শেখ অক্টোবর ২০১৭ সাল থেকে এ বাহিনীর নের্তৃত্ব দিয়ে আসছে।

“ছোট সামসু বাহিনী” সম্পর্কে জানা যায় যে, বাগেরহাট জেলায় মংলা থানায় সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মংলা, শ্যালাগাং, হারবাড়িয়া, ভদ্রা, সুন্দরবনের পশুর নদী এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় অপর একটি জলদস্যু বাহিনী। পশুর নদী সংলগ্ন বিভিন্ন খাল ও চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালাগাং সংলগ্ন অঞ্চলের বনজীবি ও জলজীবি সাধারণ মানুষরা তাদের প্রধান লক্ষ্য। মোঃ আকরাম সানা(৩২), পিতাঃ মোঃ ইদ্রিস আলী সানা নভেম্বর ২০১৭ সাল থেকে উক্ত বাহিনীর নের্তৃত্বে রয়েছে।

“মুন্না বাহিনী” সম্পর্কে জানা যায়, এই বাহিনী পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ সংলগ্ন মংলা, হারবাড়িয়া, ভদ্রা এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় অপর একটি জলদস্যু বাহিনী। পশুর নদী সংলগ্ন বিভিন্ন খাল ও চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালাগাং সংলগ্ন অঞ্চলের বনজীবি ও জলজীবি সাধারণ মানুষরা তাদের প্রধান লক্ষ্য। মোঃ মোস্তাক মল্লিক(৫০), পিতাঃ মৃত আহম্মদ মল্লিক ২০১৭ সাল থেকে এ বাহিনীর নের্তৃত্ব দিয়ে আসছে।

খুলনা, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন থানায় উক্ত বাহিনীর সদস্যদের অনেকের নামে/বেনামে একাধিক মামলা চলমান। র‌্যাব কর্তৃক জোরালো গোয়েন্দা তথ্যের যোগসূত্র নির্ণয়ের পর পরই সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে জলদস্যু বিরোধী অভিযানের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবনের প্রতিটি নদী ও শাখা জুড়ে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীর অবিরাম টহল এবং দৃঢ় মনোভাবের ফলে জলদস্যু/বনদস্যু দলগুলো কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এবং তাদের অপরাধসীমা প্রায় শূণ্যের কোঠায় চলে এসেছে। বিভিন্ন জলদস্যু/ডাকাত বাহিনী র‌্যাব এর হাতে নিস্ক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি র‌্যাব এর ক্রমাগত একাধিক কঠোর অভিযান, অতি সক্রিয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং কৌশলগত পদক্ষেপের কারণে, তারা নিজেদের অপরাধ অনুধাবন করতে শুরু পারে এবং অপরাধের পথ থেকে সরে না আসলে র‌্যাবের ক্রমাগত অভিযানে তাদের ভয়ংকর পরিনিতির কথাও অনুধাবন করে। ফলে, তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের কাছে থাকা সমস্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আইনের কাছে নিজেদেরকে সোপর্দ করতে ইচ্ছা পোষণ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৬, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে ০২ মে ২০১৮ তারিখ হতে বিশেষ অভিযান আরম্ভ করে। ২২ মে ২০১৮ তারিখ সুন্দরবন এর আওতাভুক্ত চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত হারবাড়িয়া দক্ষিন পাশে পশুর নদীর পূর্ব পাড় ধান সিদ্ধের চরে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনাকালে জলদস্যু/ডাকাত ‘‘দাদা ভাই বাহিনী’’ প্রধান মোঃ জয়নাল আবেদীন @ রাজন বিশ্বস্ত তথ্যদাতা মারফত চাঁদপাই রেঞ্জের বনের ভিতরে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৬ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল পশুর নদীর পূর্ব দিকে জয়মুনীর দক্ষিণপাড় মোড়গ মারী খালের সাথে সুন্দরবনের ভিতর তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে। উক্ত স্থানে পৌছালে একদল মানুষকে সাদা কাপড়ে উড়িয়ে দু’হাত তুলে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। র‌্যাব-৬ এর আভিযানিক দলটি পূর্ণ নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক তাদের নিকট পৌঁছে দেখতে পায় যে, তাদের কিছু সদস্য কর্দমাক্ত গাছের ভিতরে লুকিয়ে আছে। তারা জানায় যে, তারা দাদা ভাই বাহিনীর সদস্য এবং তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ তারা সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ পূর্বক আভিযানিক দলের নিকট হস্তান্তর করতে চায় এবং নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে- (১) মোঃ জয়নাল আবেদীন @ রাজন@ দাদা ভাই (৩৮), পিতা-মৃত রবিউল হোসেন, সাং-উত্তর রেহানীয়া, থানা-হাতিয়া, জেলা-নোয়াখালী, এ/পি-দক্ষিন মিঠাখালী, থানা-মঠবাড়িয়া,  জেলা-পিরোজপুর। (২) মোঃ জাকির হাওলাদার (৩৫), পিতা- তাজ উদ্দিন হাওলাদার, সাং-সোনাতুনিয়া মাদ্রাসা, থানা-রামপাল, জেলা-বাগেরহাট। (৩) পলাশ শেখ (৩০), পিতা-আব্দুস সালাম শেখ, সাং- মাকড়ডোম নারিকেলতলা মিঠাখালী চাঁদপাই, থানা-মোংলা, জেলা-বাগেরহাট, (৪) মোঃ বিল্লাল শেখ(৩০), পিতা-বাচ্চু শেখ, সাং-আট টাকি, থানা-ফকিরহাট, জেলা-বাগেরহাট, (৫) মোঃ রিজা শেখ (৪৫), পিতা-মৃত শুকুর আলী শেখ, সাং-জারিয়া কাহারডাঙ্গা, থানা-ফকিরহাট, জেলা-বাগেরহাট, এ/পি-ক্ষেতচর,  থানা-কোতয়ালী, মহানগর-চট্রগ্রাম, (৬) মোঃ দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার (৪০), পিতা-মৃত মকবুল আলী হাওলাদার, সাং-ইকরি, থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুর, (৭) শেখ জিয়াউর রহমান (৩০), পিতা-শেখ শাহজাহান, সাং-কাশিপুর, থানা-রামপাল, জেলা-বাগেরহাট, (৮) মোঃ রিপন (২৫), পিতা-মৃত আশরাফ, সাং-যুগীরপোল, থানা-খানজাহান আলী, মহানগর-খুলনা, (৯) আবু বক্কর সিদ্দিক @ মহসীন শেখ (৩০), পিতা-শেখ আইয়ুব আলী, সাং-উৎকুল, থানা-বাগেরহাট, জেলা-বাগেরহাট, (১০)মোঃ ইয়াছিন সরদার (৩০), পিতা-মোঃ মর্শিদ সরদার, সাং-রঘুনাথপুর, থানা-বাগেরহাট, জেলা-বাগেরহাট, (১১) মোঃ কামাল শিকারী(৩৭), পিতা-মৃত আঃ জব্বার শিকারী, সাং-শ্রীপল তলা, থানা-রামপাল, জেলা-বাগেরহাট, (১২) আঃ করিম@ ম্যাজিক (৩৪), পিতা-মোঃ ইসমাইল গাজী, সাং-সেন্ট্রাল কালিনগর মুন্সিগঞ্জ, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা, (১৩) মোঃ মনিরুল মোল্লা @ মনি (৩৪), পিতা-মৃত আশরাফ মোল্লা, সাং-কচুয়া, থানা-ফকিরহাট, জেলা-বাগেরহাট, এ/পি-ইসলামাবাদ, থানা-রামপাল, জেলা-বাগেরহাট। তাদের নিকট অস্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা অস্ত্র বনের ভিতর লুকিয়ে রেখেছে বলে জানায়। অতঃপর আভিযানিক দলটি তাদেরকে গ্রেফতার করতঃ পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে সুন্দরবনের আনুমানিক ৩০০-৪০০ গজ ভিতরে প্রবেশ করলে আসামীগণ প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে বনের বিভিন্ন ডাল দিয়ে ঢাকা অবস্থায় নি¤œলিখিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থলের নিকট অবস্থানরত জেলে ও মাঝিদের উপস্থিতিতে তাদের নিকট থেকে ০৩ টি বিদেশী দোনলা বন্দুক, ০৪ টি বিদেশি একনলা বন্দুক, ০১ টি বিদেশি .২২ বোরের রাইফেল, ০৩ টি পাইপ গান ও ০১ টি এয়ার রাইফেলসহ সর্বমোট ১২ টি দেশী ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার অস্ত্রের প্রায় ১৭৮ রাউন্ড তাঁজা গোলাবারুদ জব্দ করা হয়।

একই দিন কুখ্যাত “হান্নান বাহিনীর’’ সদস্যগণ নির্ভরযোগ্য তথ্যদাতা এর মাধ্যমে র‌্যাব-৬ এর উক্ত আভিযানিক দলের সাথে যোগাযোগ করে এবং বাগেরহাট জেলার মংলা থানাধীন সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে জোংড়া খালের গোড়ায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে। আভিযানিক দলটি বাগেরহাট জেলার মংলা থানাধীন সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে জোংড়া খালের গোড়ায় আনুমানিক ৩০০ গজ পূর্বদিকে পৌঁছালে কয়েকজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পূর্ণ নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে এগিয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের নিকট পৌঁছালে তারা বনের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে আভিযানিক দলের সামনে হাত উঁচু করে করে দাঁড়িয়ে থাকে এবং নিজেদেরকে জলদস্যু/বনদস্যু “হান্নান বাহিনীর’’ সদস্য বলে পরিচয় দান করে- (১) মোঃ হান্নান শেখ (৪৫), পিতা-আহম্মেদ শেখ, সাং-কৈগদ্দাসকাঠি, থানা-রামপাল, জেলা-বাগেরহাট, (২) মোঃ আব্দুল হাওলাদার (৩০), পিতা-মোঃ তরিকুল হাওলাদার, সাং-ছোট আমরাতলা, থানা-মোংলা, জেলা-বাগেরহাট, (৩) মোঃ আকবর হোসেন পাহাড় (৪০), পিতা-মৃত মাজ্জন পাহাড়, সাং-তেতুল তলারচর, থানা-কয়রা, জেলা-খুলনা, (৪) মোঃ এবাদুল ইসলাম (২৫), পিতা মৃত-আবুল হাশেস জমাদ্দার, সাং-মুন্সিগঞ্জ দক্ষিন কদমতলা, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা, (৫) মোঃ আসাবুর শেখ (২৮), পিতা-মৃত আজিত শেখ, সাং-চাকলী, থানা-ফকিরহাট, জেলা-বাগেরহাট, (৬) মোঃ মাসুম বিল্লাহ শেখ (৩৩), পিতা-মৃত আব্দুর রব শেখ, সাং-বাগমারা, থানা-রুপসা, জেলা-খুলনা, (৭) মোঃ নুরুল ইজারদার(৪০), পিতা- মৃত মোসলেম ইজারদার, সাং-আদাঘাট, থানা- রামপাল, জেলা- বাগেরহাট, (৮) মোঃ সেলিম মোড়ল (৪৫), পিতা-মোঃ ইমান আলী মোড়ল, সাং-জাবাখালী, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা তারা আভিযানিক দলকে আরো জানায় যে, তাদের ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ বনের ভিতর বিভিন্ন স্থানে লুকানো আছে যা তারা হস্তান্তর করতে চায়। অতঃপর আভিযানিক দলটি জলদস্যুদের গ্রেফতার করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলে ও মাঝিদের নিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের লক্ষ্যে বনের মধ্যে তল্লাশী শুরু করে। বনের মধ্যে অনুমান ২০০-৩০০ গজ ভিতরে লুকানো অবস্থায় একাধিক প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে ভরা অবস্থায় অস্ত্র-গুলি পাওয়া যায়। উক্ত বস্তা থেকে ০৪ টি দেশিয় পাইপ গান ও ০৪ টি এয়ার রাইফেল সহ  সর্বমোট ০৮ টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও শটগানের ১৩০ রাউন্ড তাঁজা গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এমতাবস্থায় র‌্যাবের দলটি তাদেরকে অতি সর্তকর্তার সাথে নিরস্ত্র করে একটি কাঠের তৈরী ট্রলারে করে ব্যাটালিয়ন সদরে নিয়ে আসে।

একই দিন সুন্দরবনের কুখ্যাত “আমির আলী বাহিনীর’’ সদস্যগণ বিস্বস্ত তথ্যদাতা এর মাধ্যমে র‌্যাব-৬ এর অপর একটি আভিযানিক দলের সাথে যোগাযোগ করে র‌্যাব-৬ এর প্রতিনিধির কাছে অস্ত্রসহ আত্বসমর্পন করবার জন্য ইচ্ছা পোষন করে। এরই প্রেক্ষিতে আভিযানিক দলটি বাগেরহাট জেলার মংলা থানাধীন সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে জোংড়া খালের গোড়ায় “আমির আলী” বাহিনীর প্রধান আমিরুল ইসলাম তার দল-বল , অস্ত্র-সস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে র‌্যাব-৬ এর আভিযানিক দলের কাছে আত্বসর্মপন করার জন্য হাত উঁচিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে এবং নিজেদেরকে জলদস্যু/বনদস্যু “আমির আলী বাহিনীর’’ সদস্য হিসেবে পরিচয় প্রদান করে (১) আমিরুল ইসলাম (৩৫), পিতা-মোঃ শেখ, সাং-বসুন্দিয়া, থানা-অভয়নগর, জেলা-যশোর, (২) মুকুল হোসেন (৩৫), পিতা-শামসুল গাজী, সাং-বংশীপুর, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা, (৩) মোঃ আলমাস হোসেন (৪০), পিতা- মোঃ জাহান আলী মালী, সাং- ফতেহপুর, থানা- পাইকগাছা, জেলা- খুলনা, (৪) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২), পিতা-মোঃ মাওলা বক্স সানা, সাং-দাতিয়াখানা, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা, (৫) মোঃ নাজমুল মল্লিক (২৮), পিতা- আনিস মল্লিক, সাং-গাবা, থানা-সাতক্ষীরা সদর, জেলা- সাতক্ষীরা, (৬) মোঃ আলামিন সরদার (৩০), পিতা-মোঃ আঃ সালাম সরদার, সাং-৬ নং কয়রা, থানা- কয়রা, জেলা- খুলনা, (৭) মোঃ সাদ্দাম তরফদার (২২), পিতা-আবুল তরফদার, সাং-ডুমুরিয়া, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা। তারা আভিযানিক দলকে আরো জানায় যে, তাদের ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ বনের ভিতর বিভিন্ন স্থানে লুকানো আছে যা তারা হস্তান্তর করতে চায়। অতপর আভিযানিক দলটি জলদস্যুদের গ্রেফতার করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় মাঝিদের নিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের লক্ষ্যে বনের মধ্যে তল্লাশি শুরু করে। বনের মধ্যে আনুমানিক ১০০-১৫০ গজ ভিতরে গাছের গোড়ায় লুকানো অবস্থায় প্লাস্টিকের বস্তা থেকে ০১ টি বিদেশি সিক্স সুটার গান, ০১ টি বিদেশি শটগান, ০১ টি বিদেশি .২২ বোরের রাইফেল, ০১ টি এয়ার রাইফেল, ০১ টি দেশীয় পাইপগানসহ সর্বমোট ০৫ টি দেশি ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার অস্ত্রের প্রায় ৪১ রাউন্ড তাঁজা গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এমতাবস্থায় র‌্যাবের দলটি তাদেরকে অতি সর্তকর্তার সাথে নিরস্ত্র করে একটি কাঠের তৈরী ট্রলারে করে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর, খুলনায় নিয়ে আসে।

অন্য দিকে র‌্যাব-৮, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে ১০ মে ২০১৮ তারিখ হতে বিশেষ অভিযান আরম্ভ করে। ২৩ মে ২০১৮ তারিখ সুন্দরবন এর আওতাভুক্ত চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত পশুর নদীতে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনাকালে জলদস্যু/ডাকাত ‘‘সূর্য্য বাহিনী’’ প্রধান মোঃ আবুল হোসেন(৩৮) বিশ্বস্ত তথ্যদাতা মারফত চাঁদপাই রেঞ্জের পশুর নদীস্থ ক্যাম্পের খাল নামক স্থানে বনের ভিতরে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৮ এর আভিযানিক দল রওনা করে। ক্যাম্পের খালের উত্তর পাড়ে গহীন জঙ্গলের মধ্যে আকষ্মিক ভাবে কয়েক জন ব্যক্তিকে র‌্যাবের টহল নৌযান দেখে পলায়ন করতে লক্ষ্য করা যায়। এ সময় হ্যান্ড মাইকে তাদের আশ্বস্ত করা হলে তারা জঙ্গল থেকে হাত উঁচু করে বের হয়ে আসে এবং নিজেদেরকে “সূর্য্য বাহিনীর’’ সদস্য (১) মোঃ আবুল হোসেন (৩৮), পিতাঃ মৃতঃ জহিরুদ্দিন শেখ, সাং- রাজনগর, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট (২) মোঃ মাজাহারুল গাজী(৩১), পিতাঃ মাজেদ গাজী, সাং- কাপাসডাঙ্গা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট (৩) মোঃ আবু হাসান (২২), পিতাঃ মঞ্জু সানা, সাং- মির্জাপুর, থানাঃ আশাশুনি, জেলাঃ সাতক্ষীরা,(৪) মোঃ কামাল হোসেন গাজী(২২), পিতাঃ আঃ জলিল গাজী, সাং- গোবিন্দপুর, থানাঃ কয়রা, জেলাঃ খুলনা,(৫) স্বপন অধিকারী(২৯), পিতাঃ মৃত নিরাঞ্জন অধিবারী, সাং- প্রসাদ নগর, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট, (৬) মাহাবুব তরফদার(৫০), পিতাঃ মৃত মুছম তরফদার, সাং- চরকাঠি, থানাঃ কচুয়া, জেলাঃ বাগেরহাট, (৭) মোঃ মাসুম মুনসী(৩০), পিতাঃ মোঃ রউফ মুনসী, সাং- দামুদার উত্তরপাড়া, থানাঃ ফুলতলা, জেলাঃ খুলনা, (৮) ছাত্তার শেখ(৪৯), পিতাঃ মৃত আঃ গণি শেখ, সাং- বাঁশেরহুলা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট, (৯) মোঃ তুহিন শিকদার(২৯), পিতাঃ মৃত শাহ আলম শিকদার, সাং- পশ্চিমবালিপাড়া, থানাঃ জিয়ানগর, জেলাঃ পিরোজপুর (১০) মোঃ আকরাম গাজী(৪২),পিতাঃ মৃত রমজান গাজী, সাং- কাপাসডাঙ্গা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট  বলে জানায়। তারা জানায় যে, তাদের ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ বনের ভিতর লুকানো আছে সেগুলো আভিযানিক দলের নিকট হস্তান্তর করতে চায়।

আভিযানিক দলটি তাদেরকে গ্রেফতার পূর্বক ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাঝিদের নিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে বনের মধ্যে তল্লাশী শুরু করে। তল্লাশীর এক পর্যায়ে বাগেরহাট জেলার মংলা থানাধীন সুন্দরবনের পশুর নদীস্থ ক্যাম্পের খালের উত্তর পাড়ে বনের মধ্যে অনুমান ১৫০ গজ ভিতরে জলদস্যু/ডাকাতদের দেখানো ও সনাক্ত মতে লুকানো অবস্থায় একাধিক বস্তা, চটের ব্যাগ, প্লাষ্টিকের কন্টেইনারের ভিতরে ভরা অবস্থায় অস্ত্র-গুলি পাওয়া যায়। সকল ব্যাগ ও কন্টেইনার থেকে সর্বমোট ১১টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং সকল প্রকার অস্ত্রের প্রায় ৩৭০ রাউন্ড তাঁজা গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

একই দিন কুখ্যাত “ছোট সামসু বাহিনীর’’ সদস্যগণ তথ্যদাতা এর মাধ্যমে আভিযানিক দলের সাথে যোগাযোগ করে এবং পশুর নদীস্থ নন্দবালা খালের ভিতর জংগলে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে। আভিযানিক দলটি নন্দবালা খালের প্রবেশ মুখ হতে অনুমান ১০০ গজ ভিতরে কয়েকজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে যায়।

দাড়িয়ে থাকা লোকদের নিকট পৌঁছালে তারা বনের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে আভিযানিক দলের সামনে হাত উঁচু করে করে দাঁড়িয়ে থাকে এবং নিজেদেরকে বনদস্যু/ডাকাত কথিত “ছোট সামসু বাহিনীর’’ জলদস্যু (১) মোঃ আকরাম সানা(৩২), পিতাঃ মোঃ ইদ্রিস আলী সানা, সাং- কাপাসডাঙ্গা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট (২) মোঃ মওলা ফকির(৪৮), পিতাঃ আঃ কাদের ফকির, সাং- ডাকরা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট (৩) জাকারিয়া শেখ(৪০), পিতাঃ ইদ্রিস আলী শেখ, সাং- খেংরাঘাট, থানাঃ বাগেরহাট, জেলাঃ বাগেরহাট (৪) হোসেন আলী (২৯), পিতাঃ গফফার গাজী, সাং- হরিনগর, থানাঃ শ্যামনগর, জেলাঃ সাতক্ষীরা (৫) মোঃ মজনু ফারাজী(৪০), পিতাঃ মৃত মান্নান ফারাজী, সাং- ডানমারী, থানাঃ মংলা, জেলাঃ বাগেরহাট (৬) মোঃ মাসুদ শেখ(৩২), পিতাঃ মৃত আরশাদ আলী শেখ, সাং- কালিকাপ্রসাদ, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট (৭) মোঃ আলামিন (৩১), পিতাঃ ছরাফ গাজী, সাং- নাপিথখালী, থানাঃ বরগুনা, জেলাঃ বরগুনা (৮) আব্দুল মাজেদ গাইন(৫২), পিতাঃ মৃত ইমান আলী গাইন, সাং- কাপাসডাঙ্গা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট (৯) মোঃ জাকারিয়া হাওলাদার(২১), পিতাঃ মৃত সবুর হাওলাদার, সাং- বুগিসাতগর, থানাঃ রায়েন্দা, জেলাঃ বাগেরহাট বলে পরিচয় প্রদান করে। তারা আভিযানিক দলকে আরো জানায় যে, তাদের ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ বনের ভিতর বিভিন্ন স্থানে লুকানো আছে যা তারা হস্তান্তর করতে চায়।

অতঃপর আভিযানিক দলটি জলদস্যুদের গ্রেফতার করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় মাঝিদের নিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের লক্ষ্যে বনের মধ্যে তল্লাশী শুরু করে। বনের মধ্যে অনুমান ১০০-১৫০ গজ ভিতরে লুকানো অবস্থায় একাধিক বস্তা, চটের ব্যাগ ও প্লাস্টিকের কন্টেইনারের ভিতরে ভরা অবস্থায় অস্ত্র-গুলি পাওয়া যায়। সকল ব্যাগ ও কন্টেইনার থেকে সর্বমোট ১০টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং সকল প্রকার অস্ত্রের প্রায় ৩১০ রাউন্ড তাঁজা গুলি উদ্ধার করা হয়।

একই দিন কুখ্যাত ‘ মুন্না বাহিনী’’ প্রধান মোঃ মোস্তাক মল্লিক(৫০), পিতাঃ মৃত আহম্মদ মল্লিক বিশ্বস্ত তথ্যদাতা মারফত চাঁদপাই রেঞ্জের পশুর নদীস্থ চরপুটিয়া ভারানী নামক খালের গহীন জংগলে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করে। এ তথ্যের ভিত্তিতে নন্দবালা খালে আটক ও উদ্ধার অভিযান করে পশুর নদীস্থ চরপুটিয়া ভারানী খালের উদ্দেশ্যে র‌্যাব-৮ এর আভিযানিক দল রওনা করে। পশুর নদীস্থ চরপুটিয়া ভারানী খালে পৌছে আভিযানিক দলটি গহীন জঙ্গলের মধ্যে আকষ্মিক ভাবে কয়েক জন ব্যক্তিকে র‌্যাবের টহল নৌযান দেখে পলায়ন করতে লক্ষ্য করা যায়। এ সময় হ্যান্ড মাইকে তাদের আশ্বস্ত করা হলে তারা জঙ্গল থেকে হাত উঁচু করে বের হয়ে আসে এবং নিজেদেরকে মুন্না বাহিনীর’’ সদস্য (১) মোঃ মোস্তাক মল্লিক (৫০), পিতাঃ মৃতঃ আহম্মদ মল্লিক, সাং- ঝনঝনিয়া, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট, (২) মোঃ মাসুম বিল্লাহ গাজী (৩৭), পিতাঃ মৃতঃ বেলায়েত হোসেন গাজী, সাং- মঠবাড়ি, থানাঃ কয়রা, জেলাঃ খুলনা, (৩) মোঃ কবির শেখ(৩৯), পিতাঃ মৃতঃ মকবুল শেখ, সাং- ভাগা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট, (৪) মোঃ আসাদুল শেখ(২৭), পিতাঃ মৃতঃ হুমায়ূন শেখ, সাং- ভাগা, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট, (৫) মোঃ ইমরান শেখ(২৪), পিতাঃ মোঃ আলী শেখ, সাং- ৬নং কয়রা, থানাঃ কয়রা, জেলাঃ খুলনা, (৬) মোঃ সোহেল শেখ(৩০), পিতাঃ মোঃ ইদ্রিস শেখ, সাং- মগরা, থানাঃ বাগেরহাট সদর, জেলাঃ বাগেরহাট, (৭) মোঃ খবির গাজী (২৭), পিতাঃ মোঃ বারিক গাজী, সাং- ছোট বেলহি, থানাঃ রামপাল, জেলাঃ বাগেরহাট বলে জানায়। তারা জানায় যে, তাদের ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ বনের ভিতর লুকানো আছে সেগুলো আভিযানিক দলের নিকট হস্তান্তর করতে চায়।

আভিযানিক দলটি তাদেরকে গ্রেফতার পূর্বক ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাঝিদের নিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে বনের মধ্যে তল্লাশী শুরু করে। তল্লাশীর এক পর্যায়ে  বাগেরহাট জেলার মংলা থানাধীন সুন্দরবনের পশুর নদীস্থ চরপুটিয়া ভারানী খালের দক্ষিন পাড়ে অনুমান ২০০ গজ ভিতরে বনের মধ্যে জলদস্যু/ডাকাতদের দেখানো ও সনাক্ত মতে লুকানো অবস্থায় একাধিক বস্তা, চটের ব্যাগ, প্লাষ্টিকের কন্টেইনারের ভিতরে ভরা অবস্থায় অস্ত্র-গুলি পাওয়া যায়। সকল ব্যাগ ও কন্টেইনার থেকে সর্বমোট ১২টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং সকল প্রকার অস্ত্রের প্রায় ২৫৫ রাউন্ড তাঁজা গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

 

২২ মে ২০১৮ তারিখ ২২.০০ ঘটিকা হতে ২৩ মে ২০১৮ তারিখ ১০.০০ ঘটিকা নাগাদ র‌্যাব-৬ ও র‌্যাব-৮ এর পৃথক অভিযানের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। অভিযানে “দাদা ভাই” বাহিনীর ১৩ জন জলদস্যু সদস্য, “হান্নান বাহিনীর” ০৮ জন জলদস্যু সদস্য “আমির আলী  বাহিনীর” ০৭ জন জলদস্যু সদস্যসহ মোট ২৮ জন জলদস্যু মোট ২৫ টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩৪৯ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ সহ র‌্যাব-৬ এর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং “সূর্য্য বাহিনীর” ১০ জন জলদস্যু, “ছোট সামসু বাহিনীর” ০৯ জন জলদস্যু এবং “মুন্না বাহিনীর” ০৭ জন সহ মোট ২৬ জন জলদস্যু মোট ৩৩টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং মোট ৯৩৫ রাউন্ড বিভিন্ন প্রকার গোলাবারুদ র‌্যাব-৮ এর নিকট আতœসমর্পণ করে। উল্লেখ্য যে, ০৬টি বাহিনীর সর্বমোট ৫৪ জন জলদস্যু ৫৮টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১২৮৪ রাউন্ড তাঁজা গুলিসহ র‌্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করে।

“দাদা ভাই বাহিনী”, “হান্নান বাহিনী”, “আমির আলী বাহিনী”, “সূর্য্য বাহিনী”, “ছোট সামসু বাহিনী” এবং “মুন্না বাহিনী” সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনের অন্যতম সংগঠিত এবং সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী। বাহিনী ০৬টি সকল অস্ত্র-গোলাবারুদসহ সদলবলে র‌্যাব-৬ ও র‌্যাব-৮ এর নিকট আত্মসমর্পণ এর ফলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে ও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে মৎস্য আহরণ করতে পারবে। বনজীবি এবং মৎস্যজীবি সাধারণ মানুষের মধ্যে এর ফলে ব্যাপক আশার সঞ্চার হবে এবং দস্যুবৃত্তিতে নিয়োজিত অন্যান্য বনদস্যু/জলদস্যুরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দারুনভাবে উৎসাহিত হবে।

বাহিনীর নাম    সদস্য সংখ্যা উদ্ধারকৃত অস্ত্র   উদ্ধাকৃত গোলাবারুদ    মন্তব্য

দাদা ভাই বাহিনী  ১৩ জন   ১২টি ১৭৮ রাউন্ড র‌্যাব-৬

হান্নান বাহিনী    ০৮ জন   ০৮টি ১৩০ রাউন্ড

আমির আলী বাহিনী    ০৭ জন    ০৫টি ৪১ রাউন্ড

সুর্য্য বাহিনী ১০ জন    ১১টি ৩৭০ রাউন্ড র‌্যাব-৮

ছোট সামসু বাহিনী ০৯ জন   ১০টি     ৩১০ রাউন্ড

মুন্না বাহিনী ০৭ জন    ১২টি ২৫৫ রাউন্ড

০৬টি বাহিনী         ৫৪ জন    ৫৮টি ১২৮৪ রাউন্ড

২১।  উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।