সুদহার বাড়ানোর অগ্রিম নোটিশ কার্যকর হবে না

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে বছরে এক শতাংশের বেশি সুদ না বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্যও অন্তত তিন মাস আগে নোটিশ দিতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে প্রজ্ঞাপন জারির দিন অর্থাৎ ৩০ মে থেকে।

এখন জুন কিংবা পরবর্তী কোনো মাস থেকে সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংক যেসব গ্রাহককে এরই মধ্যে অগ্রিম নোটিশ দিয়েছে তা কার্যকর হবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্টরা বলেন, চলতি বছর ইতিমধ্যে কোনো ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে থাকলে সেটি কার্যকর থাকবে। তবে ওই একই গ্রাহকের ক্ষেত্রে নতুন করে দ্বিতীয়বার সুদহার বাড়ানোর জন্য কোনো অগ্রিম নোটিশ দিয়ে থাকলে তার কার্যকরিতা থাকবে না। নোটিশটি যদি কোনো গ্রাহককে প্রথমবারের মতো দেওয়া হয় এবং সুদহার যদি এক শতাংশের মধ্যে থাকে তাহলে সেটি কার্যকর হবে। তবে সুদহার যদি বেশি হয় তাহলে পুনরায় গ্রাহককে তিন মাসের আগাম নোটিশ দিয়ে বাড়াতে হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীসহ সব ধরনের মানুষ ব্যাপক উপকৃত হবে। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক এরই মধ্যে সুদহার অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক মাস আগে ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসা সুদহার বেড়ে এরই মধ্যে সাড়ে ১০ থেকে ১১ শতাংশে উঠেছে। সে বিবেচনায় নির্দেশনাটি আরও আগে এলে আরও ভালো হতো।

জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার গভর্নরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার দাবি তোলেন। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অনেক ভেবেচিন্তে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখানে পরিবর্তন আনার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চান, ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসুক। সিআরআর কমানো, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হলেও সুদহার কমার কোনো লক্ষণ ব্যাংকগুলোতে নেই। এমন পরিস্থিতিতে সময়ের দাবির আলোকে এরকম নীতি নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়।

জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তারা উত্থাপন করলে এ বিষয়ে বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এরই মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত চার শতাংশের নিচে নেমেছে।

বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হালিম চৌধুরী  বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার ফলে গ্রাহকরা উপকৃত হবেন- এটা ঠিক। কেননা হুট করে কোনো ব্যাংক আর সুদহার বাড়াতে পারবে না। তবে এ নির্দেশনা ব্যাংকের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী রোববার তারা বৈঠকে বসবেন। এরপর এ বিষয়ে কথা বলবেন।

জানা গেছে, গতকাল গভর্নরের সঙ্গে প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির প্রতিনিধি দলের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১১টায়। পূর্বনির্ধারিত এ বৈঠকের এজেন্ডায় ডলারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, ক্রেডিট কার্ড ও পেমেন্ট সিস্টেম বিষয়ে আলোচনার বিষয়ে উল্লেখ ছিল। তবে বৈঠকটি রূপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে। ব্যাংকাররা সেখানে বলেছেন, এ নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে। যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে তাতে করে আগামীতে কোনো ব্যাংক সুদহার বাড়াতে গেলে নানা বাধার মুখে পড়বে। কেননা তিন মাস আগে নোটিশ দিয়ে সুদহার বাড়ানো অত্যন্ত কঠিন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এও জানিয়ে দিয়েছে যে, একবার বাড়ানোর পর যে ব্যাংক নতুন করে নোটিশ দিয়েছে তা আর কার্যকর হবে না। আবার যেসব ব্যাংক ২, ৩ বা এরকম যে কোনো হারে সুদ বাড়ানোর অগ্রিম নোটিশ দিয়েছে, তাও আর কার্যকর করা যাবে না। এক্ষেত্রে পুনরায় তিন মাসের অগ্রিম নোটিশ দিয়ে নিয়মমাফিক সুদহার বাড়াতে হবে।

ঋণের সুদে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে বুধবার এক নির্দেশনার মাধ্যমে সুদহার পরিবর্তনের বিভিন্ন নিয়ম-নীতি ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বছরে একজন গ্রাহকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ একবার সুদহার বাড়ানো যাবে। মেয়াদি ঋণে একবারে সর্বোচ্চ বাড়ানো যাবে দশমিক ৫০ শতাংশ। আর চলতি মূলধনসহ অন্যান্য ঋণে সর্বোচ্চ এক শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের সুদহার বৃদ্ধির বিষয়টিকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ঋণ ও আমানতে সুদহারের ব্যবধান বিদ্যমান ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশে নামানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনার পর সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক স্বস্তিভাব বিরাজ করলেও অস্বস্তিতে পড়েছেন ব্যাংকাররা।