তারেক আহমেদ ॥ নগরীর রূপাতলী এলাকার গৃহবধূ শিরিন খানম পুত্র সন্তানকে নিয়ে গত শনিবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৬টায় বাসযোগে ঢাকা থেকে বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পৌছান। বাস থেকে নেমে রিক্সার উদ্দেশ্যে মূল সড়ক পর্যন্ত যাওয়ার মাঝেই তার সাথে ঘটে যায় বিপত্তি। হাতে থাকা পার্স ব্যাগটি ছিনিয়ে দৌড় দেয় এক যুবক। ডাক-চিৎকার করলেও মুহূর্তের মধ্যে ওই যুবক উধাও হয়ে যায়। তিনি জানান, ওই ব্যাগে টাকা, মোবাইল, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট বই ছিল। ভুক্তভোগী নারীর আক্ষেপ, টাকা-মোবাইল এসব হারিয়ে গেলেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে যাবে না। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের জরুরী প্রয়োজনীয়তা কি দিয়ে মেটাবেন?
নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ ধরনের অপরাধ সেখানে নিত্য-নৈমিত্ত্যিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রত্যেক গভীর রাত এবং প্রত্যূষে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঘটছে ব্যাগ, মোবাইল, স্বর্ণালংকার চুরি-ছিনতাইর ঘটনা। সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার থাকলেও এত বড় একটি টার্মিনালে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ সদস্য দিয়ে সেখানকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ‘বৃহৎ সমুদ্রের মাঝে এক টুকরো মুক্তো খোঁজার ন্যায়’।
একাধিক ভুক্তভোগী মানুষ এবং সচেতন নগরবাসীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে তারা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অপরাধ কা- ঘটনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কোন সীমানা প্রাচীর না থাকাকে। সচেতন মানুষের মন্তব্য, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের মত দিন-রাত ২৪ ঘন্টা জনসমাগমপূর্ণ একটি স্থান সুরক্ষার জন্য বাউন্ডারী নেই, এ ঘটনা দেশে বিরল। বিশেষ করে বিভাগীয় শহর বরিশালের প্রবেশদ্বার হচ্ছে নথুল্লাবাদ। দূরদূরান্তের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাসগুলো এ টার্মিনালের ওপর দিয়েই যায়। টার্মিনালের অভ্যন্তরে থাকা বাস ও যন্ত্রাংশের সুরক্ষা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তায় সীমানা প্রাচীর থাকা অতিব জরুরী।
বরিশাল-ঢাকা রুটে বাসযোগের নিয়মিত যাত্রী একজন সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এমন খোলামেলা তিনি অন্য কোন শহরে দেখেননি। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় শীঘ্রই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোঃ আফতাব হোসেন বলেন, দিনে-রাতে যাত্রীদের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য সীমানা প্রাচীর দরকার। তারা বিভিন্ন সময় সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। কিন্তু নানা কারণে জনস্বার্থমূলক এ প্রয়োজনীয় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ কার্যকর হয়নি।
জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাউন্ডারী না থাকায় শ্রমিক বেশে অপরাধীরা টার্মিনালে ঢুকে চুরি-ছিনতাই করে। সীমানা প্রাচীর থাকলে অপরাধীদের আনাগোনাও কমে যাবে।