সিলেটের মেয়র হলেন আরিফুল হক

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আজ শনিবার স্থগিত দুটি কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে রাতে এ ফলাফল জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান।

আরিফুলকে বিজয়ী ঘোষণার পর তাঁর কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৩০ জুলাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হলে আমি বিপুল ব্যবধানে জয়ী হতাম। তবে আমি কখনোই জনগণের ওপর থেকে বিশ্বাস হারাইনি। ভোটারেরা আমার আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। তাই এত কারচুপি ও অনিয়মের পরও আমি জয় পেয়েছি। আজ যেভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে, এর ভোটের হিসাব দেখেই প্রকৃত চিত্র সহজে অনুমান করা যায়।’ তিনি আরও জানান, এখন নগরবাসীর সেবা ও উন্নয়নে তিনি আরও মনোযোগী হবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৪টি। এর মধ্যে স্থগিত হওয়া ২টি কেন্দ্রের মোট ভোটার ৪ হাজার ৪৭৮। এ হিসাবে আরিফুল হক চৌধুরীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করতে ১৬২ ভোটের প্রয়োজন ছিল। তবে আরিফুল দুই কেন্দ্র মিলিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ১০২ ভোট। সব কেন্দ্র মিলিয়ে প্রাপ্ত ফলাফলে তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছেন

আরিফুলের প্রাপ্ত ভোট ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। অন্যদিকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ৮৬ হাজার ৩৯৭ ভোট। সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনঃ ভোটে আরিফুল গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পেয়েছেন ১ হাজার ৪৪ ভোট এবং কামরান পেয়েছেন ১৭৩ ভোট। অপরদিকে হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আরিফুল পেয়েছেন ১ হাজার ৫৩ ভোট এবং কামরান পেয়েছেন ৩৫৪ ভোট।

সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পুনঃ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কোথাও ঘটেনি।

গত ৩০ জুলাই সিলেটসহ রাজশাহী ও বরিশালে একযোগে তিন সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে সিলেটে ভোট গ্রহণ চলে। সেদিন অনিয়মের অভিযোগে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বুরহানউদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়।

স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্র ছাড়া বাকি ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী বিএনপির আরিফুল পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। আরিফুলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। আরিফুল ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের মোট ভোটার ৪ হাজার ৭৮৮। এ দুটি কেন্দ্রের ফলাফলের অপেক্ষায় মেয়র পদের ফল আটকে ছিল।

সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চারদলীয় জোট সরকার আমলে। প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছিলেন কামরান। তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। ‘পরিবর্তন’ আওয়াজ তুলে আরিফুল হক চৌধুরী ৩৫ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে কামারানকে হারিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট। তাঁদের ভোটের ব্যবধান ছিল ৩৫ হাজার ১০০।

পাঁচ কাউন্সিলর বিজয়ী

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থগিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন শেষে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। এরপর ভোট গণনা শেষে রাতে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। দুজন সাধারণ কাউন্সিলর এবং তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্ধারণে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৩০ জুলাই অনিয়মের কারণে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকায় ২৪ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ফল আটকে ছিল। এর বাইরে সমান ভোট পাওয়ায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও নারী কাউন্সিলর পদে পুনঃ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই পাঁচজন কাউন্সিলরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩ জন, বিএনপি সমর্থিত ১ জন এবং জামায়াত সমর্থিত ১ জন রয়েছেন।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন। ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০৭ ভোট। তিনি জামায়াত সমর্থিত। অন্যদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হুমায়ূন কবীর সুহিন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৯০৬ ভোট। এ ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী ছিলেন তিনজন।

৮ নম্বর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন রেবেকা আক্তার লাকী। জিপ গাড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৭৭ ভোট। তিনি সিলেট মহানগর মহিলা লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সালেহা কবীর সেপী চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৩২৭ ভোট। এ ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী পাঁচজন।

২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বেসরকারিভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মো. আজম খান। তিনি ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৮১০। স্থানীয়ভাবে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল জলিল নজরুল টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৭২৯ ভোট। এ ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী ছিলেন চারজন।

সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন রোকসানা বেগম শাহনাজ। চশমা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৮ হাজার ৭০২ ভোট। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি এ বিজয় অর্জন করেন। তিনি নগর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছামিরুন নেছা গ্লাস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৯১ ভোট। এ ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী ছিলেন ৮ জন।

সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন নাজনীন আকতার কণা। জিপ গাড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৩৭ ভোট। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নার্গিস সুলতানা চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৯৭৩ ভোট। এর আগে গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ দুজন প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন। তাঁরা উভয়ে ৪ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়েছিলেন। তাই এখানে পুনরায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।