‘সিনহার সঙ্গে মিল নেই তিন বিচারপতির পদক্ষেপে’

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এর সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের মিল নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বৃহস্পতিবার বিকেলে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতির ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন।
আমাদের আইনজীবী যারা ছিল তারা সবাই চান আমাদের আদালতটা সমস্ত বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকুক। কারণ কারো সম্বন্ধে যেন কোনো কথা না ওঠে। সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ঠিক রাখার জন্য যাতে বিচার বিভাগকে কলুষমুক্ত রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অনেক আগে থেকেই কিন্তু বারের অধিকাংশ সদস্য দাবি জানিয়ে আসছিল। এখন প্রধান বিচারপতি এ ব্যাপারে কিভাবে কি তদন্ত করবেন অনুসন্ধান কিভাবে হবে তা ওনারাই ঠিক করবেন।

তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়েই তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। উনাদের (তিন বিচারপতির) বিরুদ্ধে অভিযোগ কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ সেটা অনুসন্ধানের পরেই জানা যাবে। কি অভিযোগ তা জনসম্মুখে প্রকাশ করাটা আমি মনে করি বিচার বিভাগের জন্য শুভ হবে না। আর এটা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির ব্যাপার এবং সেভাবেই দেখতে হবে।

এই তিন বিচারপতি কে কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আপনারা সবাই জানেন। কাদেরকে আজ বেঞ্চ দেওয়া হয়নি। কাজেই এটা আমি আর উচ্চারণ করতে চাই না।

এ রকম কি নজির আছে যে কোনো অভিযোগ প্রমাণ ছাড়াই বিচার কাজ থেকে বিরত রাখার এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অভিযোগ আছে কি নাই সেটা অনুসন্ধানের পরেই বুঝা যাবে।

অনুসন্ধানটা কে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতি ঠিক করবেন।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাও প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতিই ঠিক করবেন। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য কী পদক্ষেপ নেবেন তা ওনারাই ঠিক করবেন।

কোড অব কন্ডাক্ট লংঘনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনাতো আগে ঘটেনি যেটা আপনারা বলেছেন। তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে এক সঙ্গে অভিযোগ নজিরবিহীন হবে না কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে সঠিক রাস্তায় রাখার জন্য এটা প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির প্রাথমিক দায়িত্ব। বারের সদস্যগণ যাতে কোনো বিচারপতি সম্বন্ধে খারাপ কথা না বলতে পারে। অথবা কোনো অভিযোগ না তুলতে পারে সেটা আমরা সব সময়ই কামনা করি। আমারও ব্যক্তিগত অভিমত হলো বিচার বিভাগকে কলুষমুক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে।

এই তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেয়া হলো তার সাথে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপের মিল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে যদি সে সময় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতেন তাহলে ভালো হতো। পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পদক্ষেপগুলো অনেক আগেই নেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে অন্যদের মতো আমিও মনে করি।

আইনজীবী বা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বারের) পক্ষ থেকে এই তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বারের সাধারণ সদস্যরা সব সময়ই চান বিচার বিভাগ কলুষমুক্ত যাতে থাকে এবং ভাবমূর্তি যেন সাধারণ জনগণের কাছে উজ্জ্বল থাকে।

এ নিয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে আপনার কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি আমাকে জানিয়েছেন তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির তাতে সম্মতি আছে এবং রাষ্ট্রপতির সাথে আলাপ আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে? জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেটা অভিযোগ কী, এ সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা রাষ্ট্রপতি আশা করি সিদ্ধান্ত নেবেন।

তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সমস্ত বিচার বিভাগের জন্য নতুন বার্তা কি না এর জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই অবশ্যই, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ থাকতে পারে না। কোনো মন্ত্রী থাকতে পারে না, কোনো বিচারপতিও থাকতে পারে না এবং আমরা সাধারণ মানুষও থাকতে পারি না। কাজেই এটা অব্শ্যই একটি ইঙ্গিত যাবে অন্যান্যদের কাছে যারা নিজেদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করছেন না।

এই ঘটনার পর তিন বিচারপতির ছুটি মঞ্জুর হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির সাথে কোনো কথা হয়নি।

কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী কি সে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা প্রধান বিচাপতি ঠিক করবেন। প্রধান বিচারপতিও যা করছেন তা আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিরদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন।

বিচারপতিদের অপসারণেরতো কোনো আইন নাই এখন কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শোনেন এই সমস্ত টেকনিক্যাল কথা বলে রাষ্ট্রের বিরাট অঙ্গ বিচার বিভাগকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। বিচার বিভাগের জাজদের অ্যাপয়েন্টিং অথরিটি রাষ্ট্রপতি। তিনি যদি মনে করেন যে একজন বিচারপতির যেভাবে চলা উচিত, সেভাবে তিনি চলছেন না তার সম্পের্কে নানা রকম কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং জনসাধারণও সে সম্পর্কে বলছে তখন কী রাষ্ট্রপতি চুপ করে বসে থাকতে পারে। এর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তাকে নিতেই হবে।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বলবৎ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটা রিভিউ পিটিশন ফাইল করে রেখেছি। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যদি থাকতো প্রধান বিচারপতি তার কনিষ্ঠ তিন বিচারতিকে নিয়ে একটা অনুসন্ধান করার জন্য পদক্ষেপ তারা নিতেন। রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের তদন্ত রিপোর্ট পাঠাতেন।

প্রধান বিচারপতি এখনও আছেন, তার কনিষ্ঠ দুইজনও আছেন কিন্তু প্রধান বিচারপতি শুধুমাত্র দু’জনের সাথে না আপিল বিভাগের সমস্ত বিচারপতিদের সাথে পরামর্শ করে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের কথা তাদের জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছুটির আবেদন করেছেন ওই তিনজন বিচারপতি।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

সাইফুর রহমান বলেন, ‘হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে তারা ছুটির প্রার্থনা করেন।’

ওই তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক। তবে, কী কারণে বা কী অভিযোগে তাদের বিচারকাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, তা জানানো হয়নি।