সিনহার ফেরা না ফেরা সিঙ্গাপুর নিয়ে রহস্য

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির মেয়াদ শেষে হয়েছে গতকাল। গত রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার নতুন করে ছুটি নেওয়ার আবেদনপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে জমার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টের কোনো সূত্রও নিশ্চিত করতে পারেনি বিচারপতি সিনহা কবে ফিরবেন। সিঙ্গাপুরে তার সর্বশেষ অবস্থান নিয়েও নানারকম কথা হচ্ছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে তার কানাডা হয়ে আবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তার স্বদেশে ফেরার কোনো তথ্য এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানাতে পারেনি কোনো এয়ারলাইনস। ফলে তার ফেরা-না ফেরা নিয়ে নানামুখী কথা শুরু হয়েছে। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা তার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তার দায়িত্বে ফেরা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করবে। এ ছাড়া একাধিক সংস্থাও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। এর মধ্যে তার বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় বিভিন্ন সংস্থার হাতে রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বিচারপতি সিনহার আর নাও ফেরা হতে পারে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র পাঠাতে পারেন। তবে কবে, কখন এই পদত্যাগপত্র জমা দেবেন— তা কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি।

জানা গেছে, বিচারপতি সিনহা শেষ অফিস করেন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে ২৪ আগস্ট। ৩ অক্টোবর আদালত খোলার আগের দিন সরকারের তরফ থেকে তার ছুটিতে যাওয়ার কথা জানানো হয়। এরপর ১৩ অক্টোবর বিমানযোগে তিনি অস্ট্রেলিয়া রওনা হয়ে যান। তার আগে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা তিনি ‘দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত’ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

৩৯ দিনের দীর্ঘ ছুটি শেষে বিচারপতি সিনহা কবে দায়িত্বে ফিরছেন— জানতে যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে উনার (প্রধান বিচারপতি) ছুটির বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই। তিনি যদি ছুটি বাড়িয়ে না নেন বা কিছু না জানান, তাহলে চলতি ছুটির পর তা অনুপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে। ’ এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো জটিলতা ঘটবে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একেবারেই না, এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নেবেন। সেখানে “অনুপস্থিতির” বিষয়টি বলা আছে। ’

আর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি শুধু এতটুকু জানি যে, উনার পক্ষে আদালতে ফিরে এসে এজলাসে বসে কাজ করা সুদূরপরাহত। ’

প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি। এ কারণে তারা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একই বেঞ্চে বসতে রাজি নন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।

এরপর ১৮ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হতে পারে। ’