কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের আশ্বাস ও সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীদের একাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকা আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীদের এই অংশটি বলছেন, সব শিক্ষার্থী আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এর আগে বিকেলে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সচিবালয়ে আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সচিবালয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, তরুণদের দাবি যৌক্তিক হলে তা উপেক্ষা করা হবে না। আগামী মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সরকার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এ পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখবে।
'বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ' এর আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদল ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়।
পরে সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রাজু ভাষ্কর্যে এসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে হাসান আল মামুন বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আগামী ৭ই মে পর্যন্ত সরকার কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এর ফল কি হবে তা আমাদেরকে ৭ই মে এর মধ্যেই জানানো হবে। এ সময়ের মধ্যে সরকার কোটার সংস্কার করবে বলেও আমাদের জানানো হয়েছে। সে পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত থাকবে।
তবে প্রতিনিধিদের এ বক্তব্যে তাৎক্ষণিক অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের একাংশ। আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকে তারা।
আন্দোলনে অংশগ্রণকারী এই অংশের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, আন্দোলনকে কৌশলে বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই একমাস সময় নেওয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার করতে এতদিন সময় লাগে না। একমাস পর রমজান মাস এবং সকলের পরীক্ষা থাকবে। যদি কোটা সংস্কার না হয় তাহলে ওইসময় আন্দোলন করতে করতে কয়জন আসবে? তাই আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানি না।
রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে এই রিপোট লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের একটি অংশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এসময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্ত্বর এলাকায় ঢাকা কলেজ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও বিভিন্ন হল ইউনিটের ছাত্রলীগ কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানীক বলেন, আন্দোলনকারীদের অনেক আগেই চলে যেতে বলা হয়েছে। এই সময় ক্যাম্পাসে বাইরের কেউ প্রবেশ করার সুযোগ নেই। তাছাড়া ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কোনো সংগঠনকে দেওয়া হয়নি। তাই এখানে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আগের দিনের আন্দোলনের জের ধরে সোমবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা এসময় মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় প্রদক্ষিণ করেন।
সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটার প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, ১০ শতাংশের বেশি কোটায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে টানা আন্দোলন চললেও রেববার তা সহিংস রূপ নেয়। এদিন শাহবাগ মোড় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়।
এরপর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হল থেকে বেরিয়ে এসে টিএসসিতে অবস্থান নেন। টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাতভর পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com