অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের মুসলিম কমিউনিটির নেতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাজী খালেকুজ্জামান আলী বেশ কিছুদিন ধরে গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমাধিস্থল রুকউড কবরস্থানে মুসলমানদের জন্য বরাদ্দ দাফন করার জায়গা প্রায় শেষ হতে চলেছে। ১৯৮০ সালে কয়েকজনের সহায়তায় মুসলিমদের জন্য এ কবরস্থানটিতে জায়গা করে নিয়েছিলেন রিভারস্টোন মুসলিম কবরস্থান বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী খালেকুজ্জামান আলী। গত প্রায় ৪০ বছরে ৬ হাজার মুসলিমের দাফন করা হয়েছে এ কবরস্থানে। শিগগিরই এ কবরস্থানের মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা শেষ হয়ে যাবে। তারপর কী হবে? এ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তিনি।
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত খালেকুজ্জামান বন্ধুর মেয়ের কবর ও নিজের শিক্ষকের কবর দেখিয়ে বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্য হলো কবরগুলোর ওপর গাছ লাগাতে হয়। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, যখন গাছ বৃষ্টির পানি শুষে নেয়, তখন তা মৃত ব্যক্তির আত্মায় শীতলতা পৌঁছায়।’ এ অবস্থায় রুকউড কবরস্থানের মুসলিমদের জন্য স্থান সংকুলানের পাশাপাশি সিডনির রিভারস্টোন মুসলিম কবরস্থানেও আর মাত্র ৫০টি কবরের জায়গা বাকি রয়েছে।
আর মুসলিমদের ঠিক এমন দুশ্চিন্তার সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন সিডনির ক্যাথলিকেরা ধর্মাবলম্বীরা। মুসলিমদের দাফন করার জন্য ৪ হাজার ৫০০ কবরের জায়গা দেওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন তারা। পশ্চিম সিডনির কেম্পস ক্রেক ক্যাথলিক কবরস্থান থেকে জরুরি ভিত্তিতে দাফনের এ জায়গা দেওয়া হবে। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সরকার প্রশাসনে ভৌগোলিক তথ্য গবেষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালেহ আহমেদ জামী। তিনি বলেন, এ বিরল দৃষ্টান্ত আন্তধর্মীয় সহযোগিতার এক চমৎকার নজির হয়ে থাকল পৃথিবীতে।
সিডনি জুড়েই প্রায় সকল কবরস্থানগুলোতেই স্থান সংকুলান দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, আগামী ২০ বছরের মধ্যেই প্রায় সকল কবরস্থানগুলোই পূর্ণ হয়ে যাবে। এর মধ্যেও কাজী খালেকুজ্জামান আলীর প্রচেষ্টায় মুসলিমদের কবরের জায়গা দেওয়ার কথা জানিয়েছে ক্যাথলিকেরা। তবে নতুন কবরস্থান তৈরির জন্য জায়গা নেই বলে জানিয়েছে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। আর এমন কথা অযৌক্তিক বলে দাবি ক্যাথলিক কবরস্থান বোর্ডের প্রধান নির্বাহী পিটার ও’মিয়ারার। তিনি ইতিমধ্যেই ২ লাখ ২০ হাজার কবরের জায়গা তৈরির অনুমতির জন্য সুপারিশ জানিয়েছেন। বলেন, ‘মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান যারা কবর দেওয়ায় বিশ্বাসী, তাদের কবরের জায়গার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট জমি রয়েছে। ছোট শহরের স্থানীয় সরকারের রাজনীতির জন্য আমরা আটকে পড়ে গেছি।’ মুসলিমদের জন্য কবরের জায়গা দেওয়ার স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা জানান পিটার ও’মিয়ারা।
তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালে আমরা কবরস্থানের জন্য জায়গা কিনেছি। তবে কবরস্থান তৈরির জন্য আসল অনুমোদন গত ৫ বছরেও পাইনি। ২০১৩ সালে সিডনির ভেরোভিলে কবরস্থান তৈরির জন্য প্রায় ১৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলারের বিনিময়ে ১১৩ হেক্টর জায়গা কেনেন ক্যাথলিকেরা। এ জায়গায় ১ লাখ ৩৬ হাজারকে কবর দেওয়া যাবে। কেম্পস ক্রেক কবরস্থানে মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ জায়গায় কবরস্থান তৈরিতে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার খরচা হবে। প্রতি কবরের জন্য ৬ হাজার ৭০০ ডলার ও দ্বৈত কবরের জন্য ৭ হাজার ৪৪১ ডলার দিতে হবে। কবরস্থানে একটি প্রার্থনার ঘর ও অজুখানা তৈরি করে দেবেন ক্যাথলিকেরা। তাদের এ মনোভাবে সকল অস্ট্রেলিয়ানদের মহৎ কাজে অনুপ্রাণিত করবে বলে জানিয়েছেন কাজী খালেকুজ্জামান আলী। এ জন্য তিনি আজম আলীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান, কারণ ক্যাথলিকদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রথম উদ্যোগ তিনিই নিয়েছিলেন।
সূত্র: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।