সিটি কর্পোরেশনের যুগান্তকারি প্রকল্পে লোডশেডিংয়েও আলোকিত বরিশাল

:
: ৬ years ago

এম.এস.আই লিমনঃ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এলাকা গড়িয়ার পার এর বাসিন্দা কাঞ্চন ব্যাপারি পেশায় তিনি কৃষক। বহু বছর যাবত ওই এলাকায় তার বসবাস ,বর্ধিত এলাকার হলেও এতকাল যাবত তেমন কোন নাগরিক সুবিধা তার চোখে পরেনি। না রাস্তাঘাট না ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোয়া।২০১৭ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারিদের গড়িয়ার পার এলাকায় পদচারনা দেখতে পেয়ে কারন জানতে উৎসুক এবং পরবর্তীতে জানতে পারেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লাইট বসানো হবে তাদের এলাকার প্রধান সড়কে।

প্রথমে বিষয়টি আচ করতে না পারলেও মাত্র একমাসের ব্যাবধানে দুই শতাধিক এলইডি ভালব স্থাপন এবং এর কার্যকারিতা প্রত্যক্ষ করে অনেকটাই হকচকিয়ে যায় কৃষক কাঞ্চন। সন্ধা না নামতেই মুল সড়কতো বটেই তার বাড়ি পর্যন্ত আলোর ঝলকানি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বিষয়টি অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত। সাধারনত কয়েক যুগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে অনেক মেয়র আগমন প্রস্থান উত্থান-পতন ঘটেছে। সবাই নির্বাচনের পূর্বে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরবর্তীতে আর খোজ- খবর রাখেনি। ব্যাতিক্রম কেবল দেখতে পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা বিএনপি ঘরানার মেয়র আহসান হাবিব কামাল। বিরোধি দলের মেয়র হয়েও নানা প্রতিকুল পরিবেশে পাচটি বছর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়া এবং শেষ সময়ে,কোন রকম রাখ ঢাক না করেই বরিশাল সিটির কেন্দ্রস্থল এবং বর্ধিত গুরুত্বপুর্ন স্থানে অন্ধকারে আলোর দিশারির মত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এলইডি লাইট স্থাপনের কাজ শুর করেন।অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সাফল্যের সাথে কাজ সমাপ্তিও ঘটে। যে সব স্থানে লাইটপোষ্টগুলো স্থাপন করা হয়েছে। তার চারিদিকে প্রায় ২শ’ফুট এলাকা জুরে দিনের ন্যায় আলোর বিচ্ছুরন ঘটে। সবকিছুই দেখা যায় স্পষ্ট। কম বিদ্যুৎ খরচ ,রক্ষনাবেক্ষন সুবিধা এবং একক কম্পিউটারাইজড পদ্ধতির প্রযুক্তিতে পরিচালনার কারনে এই বাতিগুলো নষ্ট হবার সম্ভাবন খুবই কম।

বহুবিধ সুবিধা সংবলিত এই ভালব এখন নগরী এবং নগরীর বর্ধিতাংশের বাসিন্দাদের আলোচনার খোরাক জুটিয়েছে। ইতোমধ্যে খোদ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারিদের দাবি উঠেছে নগরীর সব স্থানে যাতে এই পদ্ধতিতে লাইট স্থাপন করার। যদিও মেয়র আহসান হাবিব কামালে প্রস্থানের আগ থেকেই সিটি কর্পোরেশনের সকল কাজ এখন অনেকাই স্থবির হয়ে পরেছে। যার ফলে সোলার এবং এলইডি কার্যক্রমের ভাটা পরতে পারে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এডিবি’র অর্থায়নে ২০১২ সালে পিডিবি প্রজেক্ট টি শুরু হয়েও নানা কারনে থেমে থাকে প্রকল্পের কাজ।। এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেড ম্যাক্স। প্রয়াত মেয়র হিরন প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের পরে থেমে যায় প্রকল্পের কাজ ।

মেয়র কামাল নির্বাচিত হবার পরে সড়ক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্ব রেখে নগরবাসীদের স্বার্থে রাজস্ব আয়ের তহবিল থেকে ব্যায় কমাতে পুনরায় প্রকল্পের কাজ শুরু করে। সিটির গুরুত্বপূর্ন স্থানে ১৪৯৮টি এলইডি পোষ্ট স্থাপন করা সম্পূর্ন হয়েছে। এর মধ্যে সোলার ১৬ টি। চায়নার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেএমইসি লটসি (জেভি) সম্প্রতি কাজ শেষ করেছে। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পটির কাজ সম্পুর্ন করে। এলইডি ভালবে ৪০-৫০% বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, এর ফলে কোটি কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হচ্ছে। আর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সহ বিভিন্ন স্থানে সোলার এবং এলইডি ভালব স্থাপন করাতে রাতের বরিশাল এখন আলোয় পরিপূর্ণ হয়ে নগরবাসীদের দৃষ্টিনন্দন হয়ে প্রশংসা ছড়াচ্ছে। তথ্য মতে,প্রকল্পের আওতায় সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এবং অধিকতর গুরুত্বপুর্ন স্থানে মোট নন সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৩শ’ ৮২টি এরমধ্যে সুরভি পেট্রল পাম্প টু গরিয়ার পাড় এলাকায় ২৩৯টি, রেইন্ট্রি তলায় ৮১ টি,সোলনা থেকে বারৈজ্জার হাট৫৯টি,কািিশপুর স্কুল থেকে তেতুল তরা৮০টি, আনসার ভিডিপি থেকে তেতুল তলা৬৯টি, মহানগর কলেজ ৩৫টি, রায়ের খাল থেকে বকরের ভিটা৭৩টি, র২৩ নং ওয়ার্ড খান সড়ক৩৫টি,হোসেন অঅলি ফকির সড়ক২৯টি,পুরান পাড়া থেকে বটতলা৫৫টি,কবিরাজ বাড়ি থেকে মহুরি কান্দা৫০টি রসুলপুর কলোনি ৫০টি, লঞ্চঘাট এলাকায়২৩টি,ডিসি লেক এলাকায় ৪৬টি, রুপাতলি থেকে কালিজিরা১৪৬টি,রুপাতলী থেকে দপদপিয়া৭৫টি,গ্যাসটারবাইন থেকেকীর্তনখোলা সড়ক৫০টি, আদর্শ সড়ক এ ২০টি, ত্রিশ গোডাউন থেকে বেড়িবাধ৯২টি, গুর্গবাড়ি এ্যাপোলো হাসপাতাল এলাকায়৭৫টি। সোলার স্ট্রীট লাইট লাগানো হয়েছে মোট ১১৬টি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ১৪টি, ত্রিশ গোডাউন এলাকায় ৮টি,লঞ্চঘাট-মুক্তিযোদ্ধা পার্ক-কর ভবন-জিলা স্কুল-শিশু পার্ক এলাকায়১৩টি,ডিসি ঘাট এলাকায় ৮টি,রিভার ক্যাফে-আলেকান্দা মোড়- কালুশাহ সড়ক-পলিটেকনিক কলেজ-বটতলা এলাকায়৯টি,নগড় ভবনের সামনে৯টি,বিবির পুকুর পাড়- মহিলা কলেজ-রাখাল বাবুর পুকুর-জেলখানা মোড়- ডিসির বাসভবন- বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবন এলাকায় ৯টি,বিএমকলেজ এরাকায় ৬টি,পরেশ সাগর মাঠ এলাকায়৮টি,নতুল্লাবাদ এলাকায় ৬টিডিভইিডার ১২টি, চৌমাথা লেক ৩টি,স্বাধীনতা পার্ক- কাঞ্জন পার্ক এলাকায়৫টি এবং টিবি হাসপাতাল এলাকায় ৬টি লাইট স্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পদত্যাগকারি মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান,প্রয়াত মেয়র হিরন এই অত্যাধুনিক প্রকল্পের সুচনা করনলেও তিনি প্রায়াত হবার পরে প্রকল্পটি মুখ থুবরে পরার অবস্থা হয়েছিল। তিনি মেয়র হবার পরে বিশেষ করে কর্মকর্তা কর্মচারিদের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং অপচয় রোধকল্পে পুনুরায় এ ধরনের একটি জন গুরুত্বপুর্ন এবং সাশ্রয়ী প্রকল্প হাতে নেন। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর এই বাতি নিয়ন্ত্রন করা হবে সম্পুর্ন সংক্রিয় পদ্ধতিতে,সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের দ্বায়ীত্বশীল ব্যাক্তি কর্পোরেশনে বসেই সব বাতি কেবল একটিমাত্র সুইচ এর সাহায্যে জালাতে পারবে। আবার প্রত্যুশে ঠিক একইভাবে বন্ধ করতেও পারবে। এছাড়া কোন স্থানে সংযোগ লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে তা সংক্রিয়ভাবে কেন্দ্রে সিগনাল পাঠাবে। ফলে কর্পোরেশনে বসেই অনুমান করা সম্ভব হবে কোন স্থানে সমস্যা।

এ বিষয়ে বরিশার সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারি প্রকৌশরী (বিদ্যুৎ) বিভাগ ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, বরিশালের ইতিহাসে এক যুগান্তকারি অধ্যায়ের সুচনা হয়েছে। যেখানে সাধারন বাতির চাইতে ৭০/৮০ ভাগ বিদ্যুৎ কম খরচ হবে, এছাড়া সোলার প্যানেল বা সৌর বিদ্যুতের বাতি কখনই ব›দ্ধ হবেনা। এমনকি সব স্থানের বিদ্যুৎ লোডসেডিং এ আওতায় চলে গেলেও সৌর প্যানেল লাইন নিরবিচ্ছিন্নভাবে আলো দিতে থাকবে পাশাপাশি লোকবল, সংস্কার ব্যায় শুন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে তিনি আশা করেন।যেসব স্থানে প্রথম পর্যায়ে বাতি বসানো যায়নি তা ভবিষ্যতে খুব কম সময়ের মধ্যে এলইডি ও সৌর প্যানেল বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা হবে।