সিএসআর খাতের নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

ব্যাংক ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য (এনবিএফআই) কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতের জন্য নতুন নীতিমালা জা‌রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতিমালায় স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং শিক্ষা খাতে সিএসআর ব্যয়ের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক সিএসআর ব্যয়ের নতুন এ নীতিমালা জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোরশেদ মিল্লাতের নেতৃত্বে একটি দল নতুন এ নীতিমালা প্রস্তুত করে।

খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত জানান, ‘আগের নীতিমালায় সিএসআরের সংজ্ঞা ছিল না। এখন এটি স্পষ্ট করা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরে যে পরিমাণ সিএসআর ব্যয় করবে, তার প্রতিটি খাতের ব্যয়ের হার বলে দেওয়া হয়েছে।’

সিএসআর এর নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে ব্যাংক সিএসআর মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে করতে হবে। যা এতদিন ছিল ২০ শতাংশ। এছাড়া পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খাতে ব্যয়ের হার বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে ব্যয়ের হার আগের মতোই ৩০ শতাংশ রাখা হয়েছে।

সিএসআর খাতে ব্যয়ের বিষয়ে ২০১৪ সালে প্রথমবার নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার আরও বিস্তারিত আকারে নীতিমালা করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় সিএসআর ব্যয়ের হার পুনর্বিন্যাস ছাড়াও সংজ্ঞা, উদ্দেশ্যসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এরকম খাতে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।

সিএসআর ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণের জন্য সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, অবহেলিত প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ, অসহায়, হতদরিদ্র, পথ শিশুদের জন্য ব্যয় করার ওপর জোর দিতে হবে। বাছাই প্রক্রিয়া কী হবে তা বলে দেওয়া হয়েছে এবারের নীতিমালায়। এক্ষেত্রে যে খাতে ব্যয় হচ্ছে প্রথমে তার প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করতে হবে। এরপর যাদের মাঝে দেওয়া হবে তাদের বাছাই করতে হবে। কোন এলাকায় দেওয়া হবে সেটা ঠিক করতে হবে। কী পরিমাণ বিতরণ করা হবে তাও ঠিক করতে হবে। আর এসব কিছুর তথ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখতে হবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, সিএসআরের অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় না হলে দায়বদ্ধ থাকবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এজন্য অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে যথাযথ খাতে ব্যয় হয়েছে কি না তা পরিদর্শন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো সন্দেহজনক কাজে ব্যয়ের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা বা দেশের বাইরে বিনোদনমূলক কাজে সিএসআরের টাকায় স্পন্সর হওয়া যাবে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক উন্নয়ন খরচ এখান থেকে করা যাবে না। আবার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজে সামাজিক দায়বদ্ধতার টাকা খরচ করা যাবে না। এছাড়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, শিশু শ্রম, সামাজিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি তৈরি করে এমন খাতে সিএসআর করা যাবে না। এ ধরনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

খাতওয়ারী সিএসআর ব্যয়ের হার: নতুন নীতিমালায়, শিক্ষা খাতে ব্যয়ের হার ৩০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের হার ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে নূন্যতম ৩০ শতাংশ করতে বলা হয়েছে। অবশ্য করোনার কারণে গত ২ বছর স্বাস্থ্য খাতে ৬০ শতাংশ ব্যয়ের নির্দেশনা ছিল। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খাতে ব্যয়ের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, খেলা ও বিনোদনে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে।

এদিকে, সিএসআরের অপব্যবহার বন্ধ এবং একই ব্যক্তি একই সময়ে যেন একাধিক ব্যাংক থেকে সুবিধা না পায় সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি তথ্য ভাণ্ডার করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে সিএসআর সুবিধা পাওয়া ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। ব্যাংকগুলো ডাটাবেইজ থেকে তথ্য যাচাই করে সিএসআর করবে। এছাড়া নতুন নীতিমালার আলোকে শিগগিরই ব্যাংকগুলোর জন্য একটি রিপোর্টিং ফরমেট দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।