সৌদির রাজপরিবার ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনায় মুখর ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। সর্বশেষ সাক্ষাৎকারেও তিনি সমালোচনা করেছিলেন সৌদি শাসকদের।
খাসোগিকে হত্যার খবর প্রকাশের পর সৌদির নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির কাজে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম নিউজউইক-এর এক সাংবাদিককে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সাংবাদিককে খাসোগি বলেছিলেন, তিনি সৌদি নেতৃত্বের বিরোধী নন। মূলত তিনি একটি ‘ভালো’ সৌদি আরব চান।
খাসোগি বলেন, ‘আমি সৌদি শাসকদের পতন চাই না। কারণ আমি জানি, এটি সম্ভব নয় এবং এটি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। সৌদিতে এমন কেউ নেই, যারা শাসকদের উৎখাত করতে পারবে। আমি শুধু শাসকদের আহ্বান জানাই, দেশটির সংস্কার করা হোক।’
খাসোগি যুবরাজ সালমানকে একজন পুরোনো ধ্যানধারণার নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, সালমান আধুনিক বিশ্বের সব ধরনের সুযোগসুবিধা ভোগ করতে চান। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি সৌদিকে সেভাবে শাসন করতে চান, যেভাবে তাঁর দাদা দেশটি শাসন করেছিলেন।’ খাসোগি বলেন, সালমান এখনো মানুষের দিকে তাকাচ্ছেন না। তিনি যখন সৌদির মানুষের দিকে তাকাবেন, তখন সত্যিকারের সংস্কার শুরু হবে। সালমানের ‘সঠিক উপদেষ্টা’ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন খাসোগি। তিনি বলেন, একমাত্র সালমান যে রকম সৌদি চান, সেভাবে সৌদির সংস্কার হচ্ছে।
এ ছাড়া সৌদির আরও দুই যুবরাজের সমালোচনা করেছেন খাসোগি। দেশটির খেলাধুলা-বিষয়ক বিভাগের প্রধান তারিক আল-শেখ ও গণমাধ্যম-বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানিকে তিনি হিংস্র মানব হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ তাঁদের ভয় পায়। আপনি তাঁদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলে আপনাকে জেলে যেতে হবে।’
২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক খাসোগি। ঘটনার ১৭ দিন পর ‘হাতাহাতির একপর্যায়ে খাসোগির মৃত্যু’ হয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এর আগ পর্যন্ত ঘটনার ব্যাপারে টানা অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল দেশটি।
এই প্রথমবার সৌদি আরব স্বীকার করল খাসোগির মৃত্যু হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রাথমিক প্রমাণের তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হাতাহাতির একপর্যায়ে জামাল খাসোগি মারা যান। এতে বলা হয়, গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমাদ আল-আসিরি ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জ্যেষ্ঠ ঘনিষ্ঠ সহযোগী সৌদ আল-কাহতানিকে এ ঘটনায় বরখাস্ত করা হয়েছে।
সৌদির প্রধান আইন কর্মকর্তা শেখ সৌদ আল-মোজেব এক বিবৃতিতে খাসোগির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে খাসোগির দেহ কোথায় রাখা হয়েছে, এ ব্যাপারে তিনি কোনো তথ্য দেননি।
বিবৃতিতে বলা হয়, কনস্যুলেট ভবনের ভেতর যে লোকগুলোর সঙ্গে খাসোগির দেখা হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে তাঁর মারামারি হয়। একপর্যায়ে খাসোগি মারা যান। বিবৃতিতে খাসোগির আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘটনার ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় ১৮ জন সৌদি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া সৌদ আল-কাহতানি ছিলেন সৌদি রাজ কোর্টের প্রভাবশালী সদস্য এবং যুবরাজ সালমানের উপদেষ্টা। তথ্যসূত্র: এএফপি, আল-জাজিরা, সিএনএন