ড্র করলেও চলতো। দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হতো ব্রাজিলের। তবে ইউরোপিয়ান দেশ সার্বিয়া আক্ষরিক অর্থেই ছিল কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে নেইমার অ্যান্ড কোং অনায়াসে খেলেই ২-০ গোলে জয় তুলে নিলো। কোনো বিপদের সম্ভাবনাই তৈরি হতে দিলেন না নেইমাররা। নিজে গোল করতে না পারলেও একটি গোলে অ্যাসিস্ট ছিল নেইমারের। কৌতিনহোও তৈরি করে দিয়েছিলেন অন্য গোলটি। পওলিনহোর পা এবং থিয়াগো সিলভার মাথা থেকে এলো ব্রাজিলের গোল দুটি।
দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে সার্বিয়ার প্রয়োজন ছিল জয় আর ব্রাজিলের ড্র। এমন সমীকরণ নিয়ে মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে মাঠে নামে ব্রাজিল এবং সার্বিয়া। প্রথমার্ধে সার্বিয়ানদের জালে একবার বল জড়িয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ৩৬ মিনিটের সময় গোলটি করেন মিডফিল্ডার পওলিনহো। পরে ৬৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করেন সিলভা।
৩৬তম মিনিটে সার্বিয়ার একটি আক্রমণ রুখে দিয়ে নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ড থেকে লম্বা ক্রস দেন কৌতিনহো। সার্বিয়ার ডিফেন্সের ওপর দিয়ে উড়ে তাদেরই রক্ষণে এসে পড়লো।
সেই ক্রসকে শুধু দৌড়ে এসে বার্সেলোনা তারকা পওলিনহো পায়ের টোকা দিলেন। সেই টোকাতেই সার্বিয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে গিয়ে বল জড়িয়ে গেলো তাদের জালে। ১-০ গোলে এগিয়ে গেলো ব্রাজিল।
৬৭ মিনিটে অনেকদুর থেকে বল নিয়ে ছুটে আসেন নেইমার। সার্বিয়া ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে মাটি কামড়ানো শট নেন তিনি। কিন্তু বক্সের সামনে সেটিকে কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করে দেন মিলেনকোভিক। কর্নার কিক নেন নেইমার নিজে। কিকটা ছিল অসাধারণ। বল ফেলেন একেবারে পোস্টের মাঝে। লাফিয়ে উঠে সেটিতে মাথার সংযোগ ঘটান থিয়াগো সিলভা। গোল। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
গ্রুপের অন্য ম্যাচে সুইজারল্যান্ড এবং কোস্টারিকা ২-২ গোলে ড্র করার ফলে ৭ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো ব্রাজিল। গ্রুপ রানারআপ হলো সুইজারল্যান্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সিকোর মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল এবং সুইজারল্যান্ড মুখোমুখি হবে সুইডেনের।
স্পার্তাক মস্কোয় খেলার শুরু থেকেই অবশ্য আক্রমণের সূচনা করে ব্রাজিল। ২য় মিনিটেই মিডফিল্ডার ফিলিপ কৌতিনহো বল নিয়ে ঢুকে যান সার্বিয়ার রক্ষণের ভেতর। নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে তিনি শট নিলে সার্বিয়ার ডিফেন্ডাররা সেটা ক্লিয়ার করে দেন। ১৪ মিনিটে সার্বিয়ার ফিলিপ কোস্তিক বাম পায়ের শট নিলে ব্রাজিল ডিফেন্ডাররা সেটা ক্লিয়ার করে দেন।
খেলার ৯ম মিনিটেই মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন মার্সেলো। খেলার মত অবস্থা ছিল না তার। দ্রুত তাকে তুলে নিয়ে ব্রাজিল কোচ তিতে মাঠে নামান ফিলিপ লুইজকে।
২৫ মিনিটে দারুণ একে সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। বক্সের মধ্যে বল নিয়ে প্রবেশ করেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তিনি বল দেন নেইমারকে। দারুণ এক শট নিয়েছিলেন পিএসজি তারকা। কিন্তু সার্বিয়া গোলরক্ষক স্টোজকোভিক ঝাঁপিয়ে পড়ে এই যাত্রায় দলকে রক্ষা করেন।
২৯ মিনিটে গ্যব্রিয়েল হেসুসের দারুণ একটি চেষ্টা ব্লক করে দেয় সার্বিয়া। ৩৪ মিনিটে আক্রমণ করে সার্বিয়া। দুজান তাদিকের কাছ থেকে বল পেয়ে বাম পায়ের শট নেন আলেকজান্ডার মিতরোভিক। কিন্তু সেটা পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। এরপর দুই মিনিট পরই গোল। পওলিনহোর পা থেকে।
৪০ মিনিটে গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিল সার্বিয়া। কিন্তু দুজান তাদিকের শট ডান কর্নারের পাশ দিয়ে বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে নেইমার একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। ফিলিপ লুইজের কাছ থেকে বল পেয়ে অনেক দুর থেকে শট নেন তিনি। কিন্তু সেটা মিস হলো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সার্বিয়ানরা। একর পর এক আক্রমণে ব্যস্ত করে তোলে তারা। এ সময় বেশ কিছু গোলের সৃষ্টি করে সার্বিয়ানরা। তবে তাদের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন। চারটি নিশ্চিত গোল থেকে ব্রাজিলকে বাঁচিয়ে দেন তিনি।
৬১ মিনিটে প্রথম সুযোগ তৈরি করে সার্বিয়া। এলজাজিক বিপজ্জনক একটি ক্রস করেন ব্রাজিল গোল লক্ষ্যে। অ্যালিসন পাঞ্চ করে দলকে রক্ষা করেন। মিত্রোভিক ছিলেন শুধু বক্সে। তিনি হেড করার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। দারুণ সুযোগটা মিস হয় সার্বিয়ার।
এক মিনিট পরই আবারও গোলের দারুণ সুযোগ তাদিক বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান। চিপ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্ত বল চলে যায় বাইরে। পরের মিনিটেই মিলিনকোভিক-সাবিক নিজের ভাগ্যটার পরিবর্তনের একটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পোস্টের সামনে থেকে শট নিয়ে বলটি বারিয়ে পাঠিয়ে দেন তিনি। এ সময়ই পওলিনহোকে তুলে ফার্নান্দিনহোকে মাঠে নামায় ব্রাজিল। শক্তি বাড়ায় ডিফেন্সে।
৬৫ মিনিটে আরও একটি দারুণ সুযোগ পায় সার্বিয়া। এলজাজিক দারুণ এক ক্রস দেন মিত্রোভিককে। ফ্যাগনারকে পাশ কাটিয়ে দারুণ এক হেড নেন তিনি। কিন্তু অ্যালিসন ছিলেন একেবারে সামনে। বলটি থামিয়ে তিনি ধরে ফেলেন। বেঁছে যায় ব্রাজিল।
সার্বিয়া যখন একের পর এক আক্রমণে ব্যস্ত করে তোলে ব্রাজিলের রক্ষণ। তখনই ধারার বিপরীতে গোল দিয়ে বসে ব্রাজিল। নেইমারের চেষ্টা কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা এরপর তারই শট থেকে হেড করে গোল করেন থিয়াগো সিলভা।
এরপরই ম্যাচ পুরো চলে আসে ব্রাজিলের নিয়ন্ত্রণে। সার্বিয়া যেন মনোবল পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে। খেলার বাকি অংশে বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু কোনোটাই আর তারা কাজে লাগাতে পারেনি। নেইমার কয়েকটি সুবর্ণ সুযোগ মিস করে পেলেন।