প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই হলো বর্তমান সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। এ কারণে সারাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। শহর ও গ্রামের মানুষকে সমান সুযোগ তৈরি করে দিতে সরকার কাজ করছে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশে রেলওয়েকে সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছি। রেলওয়ে নতুন নতুন বগি এবং আধুনিকায়ন করে যাচ্ছি। তবে এখানে আমার একটা অনুরোধ, তা হলো- রেলের যে পুরনো ব্রিজগুলো রয়েছে সেগুলো মেরামত করতে হবে। কারণ, এসব ব্রিজগুলো এত পুরনো যেকোনো সময় এগুলো ভেঙে পড়তে পারে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, এর আগের সরকারগুলোর চিন্তা-চেতনা ছিল রেল বন্ধ করার। যে কারণে বছরের পর বছর চলে গেছে এসব ব্রিজ মেরামত করা হয়নি। তারা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলের লোকবলকে বিদায় করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গার লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। আমি মনে করি এটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল।সারাদেশে সার্ভে করে যেখানে যত পুরনো রেল ব্রিজ আছে সেগুলো মেরামত করতে হবে।
এ জন্য একটা প্রকল্প গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় আসার পর আমরা অনেক পানি শোধনাগার করেছি। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা পানি শোধনাগার করেছি। আমার একটা অনুরোধ থাকবে, পানি ব্যবহারের সময় যেন সবাই মিতব্যয়ী হই। কারণ, অনেক টাকা খরচ করে পানি শোধন করে সেই পানি সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে খুলনাবাসীর তীব্র পানির অভাব ছিল। কারণ, সেখানে নোনা পানি কারণে অনেকে তৃপ্তি সহকারে পানি পান করতে পারত না। তারা পানির জন্য বেশ কষ্ট ভোগ করেছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য মধুমতি নদী থেকে পানি এনে শোধন করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ১ লিটার পানি শোধন করতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। পানির অপচয়টা সবাই বন্ধ করবেন। কল ছেড়ে দিয়ে ব্রাশ করা, সেভ করা বা কল ছেড়ে দিয়ে গোসল করা -এগুলো কেউ করবেন না। প্রয়োজনবোধে বালতি ব্যবহার করবেন। তাতে পানির খরচ কমে যাবে।
বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগের সুবিধার জন্য আমরা বিভিন্ন জেলায় সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি। যোগাযোগের ফলে প্রতিটি অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি হচ্ছে। হরিরামপুর মানিকগঞ্জ এমন একটি এলাকা যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্যা হতো। সবসময় এখানে বন্যা লেগেই থাকত। এখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা খুব অনুন্নত ছিল। সেখানে আমরা ব্রিজ করে উন্নত যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি। পাবনা ঢালারচর জাসালপুরসহ আরও বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। রেলের মাধ্যমে মানুষ যেমন নিরাপদে যেতে পারে আবার যাতায়াতও সাশ্রয়ী হয়। সে কারণে আমরা রেলটাকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি।
বিনোদনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের এখন আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ঘরে ঘরে টেলিভিশন রয়েছে। মানুষ একটু বিনোদন চায়। চট্টগ্রাম টেলিভিশনের সময় বাড়ানোর উদ্দেশ্যটা হলো, চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের কালচারাল অনুষ্ঠানগুলো মানুষ দেখতে পারবে। চট্টগ্রামে নিজেদের একটা স্বতন্ত্র টেলিভিশন চালাতে পারবে। সেখানে স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরাও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রতিটা মানুষের ভেতরে যে সুপ্ত মেধা রয়েছে সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটবে এই টেলিভিশন কেন্দ্রের মাধ্যমে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকশিত হওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হবে। আমাদের যারা সংস্কৃতিকর্মী তাদেরও সুবিধা হবে। এছাড়া এখানে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, আজ এখানে বসে আমরা রেল যোগাযোগ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ব্রিজ নির্মাণ, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ যে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করলাম, এখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে দেখলেন যে, কোন মন্ত্রণালয়ের কী উন্নয়ন হয়েছে। এটা জানার একটা সুযোগ হলো।
সূচনা বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপকারভোগী, চট্টগ্রামের পানি শোধনাগারের উপকারভোগী, খুলনা পানি শোধনাগারের উপকারভোগী, চট্টগ্রামে টেলিভিশনের উপকারভোগী ও জামালপুরের রেল ব্যবহারকারী উপকারভোগীদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। এ সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা কিভাবে উপকৃত হচ্ছেন, সেখানকার উপকারভোগীরা তার বর্ণনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। একই সঙ্গে উপকারভোগীরা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবুর রহমান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, তথ্য সচিব কামরুন নাহার প্রমুখ তাদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।