সাম্বার অপেক্ষায় ব্রাজিল

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে বসেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। স্পেন-পর্তুগালের মতো দল বাদ পড়তে পড়তে কোনো রকমে গ্রুপ পর্বের বাধা কাটিয়েছে। ব্রাজিল-জার্মানির মতো ফেভারিটদের পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের আশঙ্কা রয়েছে। ভাবা যায়! তবে শঙ্কা থাকলেও বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সফল এ দুই দলের ভাগ্যটা নিজেদের হাতেই রয়েছে। আরও স্বস্তির বিষয়, শেষ ম্যাচে নাটকীয় জয় দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে দু’দলই। এর মধ্যে কোস্টারিকার বিপক্ষে ইনজুরি টাইমের দুই গোলে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন নেইমার-কুতিনহোরা। আজ সার্বিয়ার বিপক্ষে সাম্বার ছন্দের অপেক্ষায় পুরো বিশ্বের লাখো-কোটি ব্রাজিল ভক্ত।

ব্রাজিলের অঙ্কটা মোটেও জটিল নয়। সার্বিয়াকে হারাতে পারলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যাবে সেলেকাওদের। ড্র করলেও চলবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যাবে। তবে বাদ পড়ার শঙ্কাও আছে। যদি সার্বিয়ার কাছে তারা হেরে বসে এবং সুইজারল্যান্ড যদি কোস্টারিকার বিপক্ষে জেতে তাহলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে। তখন সুইসদের পয়েন্ট হবে সাত ও সার্বিয়ার ছয়। তাই সব সম্ভাবনা মাথায় নিয়েই আজ সার্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামতে হবে নেইমারদের। দুই ম্যাচে ব্রাজিলের পয়েন্ট চার। তাদের সমান চার পয়েন্ট সুইজারল্যান্ডেরও। দু’দলের পয়েন্ট সমান হলেও এখন পর্যন্ত গোল পার্থক্যে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে আছে ব্রাজিল। মস্কোর স্পার্টাক স্টেডিয়ামে আজ তাই জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে সেলেকাওরা।

গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় আজ সার্বিয়ার বিপক্ষে জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ব্রাজিলের। অবশ্য বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া কোস্টারিয়ার বিপক্ষে যদি বড় ব্যবধানে সুইজারল্যান্ড জিতে যায় তখন রানার্সআপ পজিশন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হতে পারে তাদের। দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় মাথায় রেখে মাঠে নামতে হচ্ছে ব্রাজিলকে। আজ রাত ৮টায় ‘এফ’ গ্রুপের দুটি ম্যাচ। সেখানে নির্ধারিত হবে ওই গ্রুপের সেরা কে হবে। যদি ‘এফ’ গ্রুপে জার্মানি রানার্সআপ হয় এবং ‘ই’ গ্রুপে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয় তখন শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হবে এ দুই জায়ান্ট। ব্রাজিলের খেলা রাত ১২টায় শুরু হবে বলে তারা ‘এফ’ গ্রুপের অবস্থাটা দেখে মাঠে নামতে পারবে।

ব্রাজিল বস তিতে অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এসব হিসাব তাদের মাথায় নেই। তারা জয়ের জন্যই মাঠে নামবেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ব্রাজিল বসের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ইনজুরি নিয়ে। কোস্টারিকার বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে চমৎকার খেলা ডগলাস কস্তা হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েছেন। বিশ্বকাপেই তার খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্রাজিলের ডাক্তার রদ্রিগো লাসমার জানিয়ে দিয়েছেন, তিন থেকে চার সপ্তাহ লাগবে কস্তার সেরে উঠতে। চোটের কারণে কোস্টারিকার বিপক্ষে খেলতে পারেননি রাইটব্যাক দানিলো। আজও তাকে পাওয়া যাবে না। তার বদলে এ ম্যাচেও খেলবেন ফ্যাগনার। এর মাঝেও সবচেয়ে বড় স্বস্তি গত ম্যাচে নেইমার গোল পাওয়া। আক্রমণভাগের আরেক সেনানী কুতিনহো তো দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের তিন গোলের দুটিই এসেছে তার পা থেকে। নেইমার-কুতিনহো স্বস্তি ফেরালেও স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার উইলিয়ানকে নিয়ে চিন্তায় আছেন তিতে। বিশেষ করে চেলসির হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো উইলিয়ান তো বিশ্বকাপে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাও খেলতে পারছেন না। ব্রাজিলও গত দুই ম্যাচে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ড্র করার পর কোস্টারিয়ার বিপক্ষে দাপটের সঙ্গেই জিতেছে। তবে এখনও তাদের খেলায় ঐতিহ্যের সাম্বা ছন্দের দেখা মেলেনি। নকআউট পর্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি ছন্দে ফেরার শেষ সুযোগও সেলেকাওদের সামনে।

সার্বিয়ার বিপক্ষে সহজে পার পাবে না ব্রাজিল। জয়ের জন্য সার্বিয়াও আজ মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে। তাদের পয়েন্ট তিন। আজ জিততে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে তাদের। অবশ্য কোস্টারিকা যদি আজ সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলে ড্র করলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা থাকবে তাদের। শেষ মুহূর্তে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়াতেই সমস্যায় পড়ে গেছে তারা। তার পরও দ্বিতীয় রাউন্ডের সম্ভাবনা বেঁচে আছে বলেই ব্রাজিলকে একটুও ছাড় দিতে রাজি নয় সার্বিয়া। দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাসও ব্রাজিলের পক্ষেই। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে সার্বিয়া সৃষ্টি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত তারা ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছে মাত্র একবার। ২০১৪ সালের ওই প্রীতি ম্যাচে ১-০-তে জিতেছিল ব্রাজিল। আজ কি তার পুনরাবৃত্তি হবে? নাকি নতুন ইতিহাস লিখবে সার্বিয়া।