সাফল্য-ব্যর্থতার কথা জানালেন বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার

:
: ৫ years ago

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৯২ দিন আগুন সন্ত্রাস হয়েছিল ঢাকায়। নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তা দমন করেছেন। তিনি বলেন, নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জনগণ সব সময় পুলিশকে সহায়তা করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে শেষ কর্মদিবসে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে এসব কথা বলেন তিনি। আগামী ১৩ আগস্ট অবসরে যাবেন তিনি। তার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন সাফল্য-ব্যর্থতার কথা।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, দীর্ঘ ৩২ বছর পুলিশে চাকরি শেষে অবসরে যাচ্ছেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৪ বছর ৮ মাস। এ সময়ে কমিশনার হিসেবে নগরবাসীকে সেবা করেছেন। এদিন ছিল তার শেষ কর্ম দিবস। অবসরের পরও দেশের স্বার্থে সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন বলে জানান তিনি।

ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সফল ও অসফল দিক সম্পর্কে তার কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, ১ হাজার ৬৮০ দিন ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিএমপির ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। সফলতা বলতে টিম ডিএমপির ৩৪ হাজার সদস্যের পরিবারকে এক ছাতার নিচে রেখে ঢাকা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন। জঙ্গিবাদ দমনে সফলতা বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম প্রবর্তনের ফলে নগরীর একটি টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যর্থতা বলতে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শতভাগ পূরণ করতে পারেননি। থানায় মানুষের সেবা পাওয়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য শতভাগ পূর্ণ করতে পারেননি। ভবিষ্যতে থানাগুলো যেন মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে সে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ঢাকা মহানগরকে যানজটমুক্ত করতে শতভাগ সফল হননি বলেও জানান তিনি। তবে এর দায় পুলিশের একার নয় বলে মনে করেন ডিএমপি কমিশনার। তার বক্তব্য, ‘দায়ভার শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশের একার নয়। কারণ এখানে রাস্তা তৈরি করে সরকারের একটা সংস্থা, সিগন্যাল বাতি রক্ষণাবেক্ষণ করে আরেকটি সংস্থা। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের দেশের মানুষের আইন না মানার প্রবণতা, উল্টো পথে যাওয়া, সিগন্যাল ভায়োলেট করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা।’

কমিশনার বলেন, বর্তমানে প্রায় ৭২ লাখ নাগরিকের তথ্য সিআইএমএস সফটওয়্যারে সংরক্ষিত আছে। নাগরিক তথ্য সংগ্রহের ফলে গুলশানে হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পর ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। হলি আর্টিসান হামলার পর ছোট-বড় ৬০টি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। তাতে অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং অনেককেই গ্রেফতার হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান সব সময় জিরো টলারেন্স। রাজধানীতে মাদকের আখড়া বলে খ্যাত সব স্থান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ডিএমপির ৫০টি থানাকে ৩০২টি বিটে ভাগ করে জনমত গড়ার কাজ করা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ কোনটি ছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কমিশনার হিসেবে চ্যালেঞ্জ ছিল দুটি। প্রথম চ্যালেঞ্জ- ডিএমপির ৩৪ হাজার সদস্যের মনোভাব পরিবর্তন করা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে মানুষের সেবা করার মনোভাব প্রতিষ্ঠা করা। দেশের অধিকাংশ মানুষ আইন মানতে চান না। আইন না মানার যে সংস্কৃতি আছে তা থেকে বেরিয়ে জনগণকে আইন মানার সংস্কৃতিতে আনা ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অভিযোগ আছে- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে। কখনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করে না। এসব বিভ্রান্তিমূলক।

পুলিশে দুর্নীতির ব্যাপারে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অন্যায়, দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রতি পেশাতেই কমবেশি আছে। ঢাকা মহানগরে জনগণের যাতে কোনো হয়রানি না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও নিবিড়ভাবে আমরা পর্যবেক্ষণ করি।’