সাফল্যের ১১ বছরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

সাফল্যের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করছে প্রাণের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। একঝাঁক তরুণ-মেধাবী শিক্ষকমণ্ডলী, মেধাবী শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় এগিয়ে চলেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বেলস পার্কে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় তার ভাষণে ঢাকার বাইরে বরিশালে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণাকে বাস্তবে রূপদান করার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সদর উপজেলার কর্ণকাঠীতে ৫০ একর জমিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের যৌক্তিক প্রত্যাশা, দাবি ও লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরের বছর ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল ক্যাম্পাসের কলেজ ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের শুভ সূচনা ঘটে।

প্রতিষ্ঠাকালীন চারটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগের ৪০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৪টি বিভাগে প্রায় ৯০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ১৯০ জন শিক্ষক, ১০৫ জন কর্মকর্তা এবং ১৫৬ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষ জনশক্তি তৈরির কারিগর হিসাবে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে স্বমহিমায়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক, গবেষণা, সহশিক্ষাসহ বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি খুব ভালোভাবেই করে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর একটি কার্যকর গবেষণাধর্মী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা, চেতনা ও দর্শনকে ছড়িয়ে দিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে নানা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগ বছরব্যাপী বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন, বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াড আয়োজন, কুইজ প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দেয়ালিকা প্রদর্শন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের লেখায় ‘তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের স্মরণিকা প্রকাশ, একাডেমিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদ থেকে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে জার্নাল প্রকাশ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ এসব আয়োজনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জমকালোভাবে পালন করে থাকে, যেখানে থাকে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি। করোনা মহামারির কঠিন বাস্তবতার কারণে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন না থাকলেও বরেণ্য ব্যক্তিদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি আয়োজনে ভিন্নমাত্রা এনে দেবে বলে আশা করা যায়। এবারের প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মহোদয়। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রাণের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে-জন্মদিনে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন : উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়