সাকরাইন উৎসবে নিষিদ্ধ হচ্ছে ফানুস-আতশবাজি

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

২০২২ সালের ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহর (৩১ ডিসেম্বর, ২০২১) উদযাপনের ফলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও অনবরত আতশবাজির বিকট শব্দে নগরবাসী পড়েন ভোগান্তিতে। আতশবাজিতে কেঁপে ওঠে গোটা মহানগরী আর ফানুসের আগুন ছিটকে পড়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে।

এসব বিষয় মাথায় রেখে পৌষ-সংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসবের দিন বিকট শব্দের আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ তথ্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আগামীকাল শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সাকরাইন উৎসব উদযাপন করা হবে। মূলত পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাটাই-ঘুড়ি, আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে এ উৎসব উদযাপন করা হয়।

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাকরাইন উৎসবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আর যেন এভাবে উদযাপন না করা হয় সেজন্য পুরান ঢাকার বিভিন্ন কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলবো।

তিনি বলেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা কঠিন। আমরা পুরান ঢাকার সর্দারদের নিয়ে বসে এ বিষয়ে কথা বলবো, এগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছি।

এর আগে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সাকরাইন তথা ঘুড়ি উৎসবে ডিজে পার্টি, আতশবাজি, ফানুস ও মাদক নিষিদ্ধের কার্যকরী নীতিমালা চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছেন পুরান ঢাকার ৮৩ জন ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা।

এবার থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে অনেকগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯-এর হটলাইন নম্বরগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ২০০টি অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে ফায়ার সার্ভিস ও ৯৯৯ এর কন্ট্রোল রুমে। ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, এসব অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগই ঘটেছে ফানুসের কারণে। তবে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড আতশবাজির কারণে হয়েছে বলে জানা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বাতাস নয়। ঢাকা শহরের মতো ঘনবসতি এলাকায় ফানুস ওড়ানোর কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করতে পারে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে ওড়ানো ফানুসগুলো যদি রাজধানীর কোনো বস্তি এলাকায় পড়তো, তাহলে আরও ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার সাক্ষী হতো দেশ। তাই নববর্ষ উদযাপনে ফানুস ওড়ানো বন্ধ চায় ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা জেলার উপ-পরিচালক (ঢাকা) দিলমনি শর্মা বলেন, জনগণের স্বার্থে ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা উচিত। এবারের অবস্থা দেখে আমাদের মনে হয়েছে, নববর্ষের উদযাপন অনুষ্ঠানে ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা দরকার।

অগ্নি ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ফানুসের কারণে এক্সিডেন্টাল আগুন ধরে কলকারখানা, জনবসতি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা উচিত। তবে অনুমতি সাপেক্ষে এটি ওড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তা কোনো জনবসতি, শহর কিংবা কলকারখানা এলাকায় নয়। সমুদ্রের তীরে এটি ওড়ানো যেতে পারে।

তিনি বলেন, পুলিশের মাধ্যমে এটি নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে, যাতে ফানুস উড়িয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ অগ্নিকাণ্ড না ঘটাতে পারেন।