সাংবাদিক সারাহর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

লেখক:
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

হাতিরঝিল লেক থেকে বেসরকারি টেলিভিশন গাজী টিভির সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর (৩২) লাশ উদ্ধার হয়। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

 

 

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফ নিয়াজী রাইজিংবিডিকে বলেন, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তা জানা যাবে। নিহতের বড় বোন রাবিতা সারাহ একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ জানায়, নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর শরীরে কোনো জখমের আলামত পাওয়া যায়নি। মৃত্যু সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। মরদেহ অচেতন অবস্থায় হাতিরঝিলের পানিতে ভাসমান ছিল। তার শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাত বা আঁচড়ের চিহ্ন নেই। বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত করা হয়।

 

সারাহ কল্যাণপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুরে। বাবার নাম বখতিয়ার শিকদার। তিনি নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি।

নিহতের বোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রাবিতা সারাহ বলেন, আমার বোন অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে আছে, ভোরে এমন সংবাদ পাই। পরে ঢাকা মেডিক্যালে এসে দেখি আমার বোন আর বেঁচে নেই। সে হলিক্রস কলেজ এবং ঢাকা সিটি কলেজে লেখাপড়া করে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিল।

 

পরিবারকে না জানিয়ে ৭ বছর আগে বিয়ে: প্রেম করে সাত বছর আগে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছিলেন সারাহ। বেশ কিছুদিন আগে থেকে রাহানুমা আলাদা হয়ে যেতে চাইছিলেন। তারা কাজি অফিসে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন। তবে দেশের পরিস্থিতির কারণে তা আর করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সারাহ মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত ছিলেন।

সারাহর স্বামীর বক্তব্য: স্বামী সায়েদ শুভ্র জানান, তারা রাজধানীর কল্যাণপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২৭ আগস্ট রাহানুমা অফিসে গিয়েছিলেন। রাতে বাসায় না ফিরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দেন। তিনি তাকে ফোন করেন। বলেন, বাসায় না এসে অন্যকে দিয়ে কেন টাকা পাঠালে? তখন রাহানুমা বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন। এই বলে ফোন রেখে দেন। পরে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে রাহানুমার লাশ দেখতে পাই।

তবে মৃত্যুর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের লোকেশন দিয়ে ফাহিম ফয়সাল নামে তার এক বন্ধুর সঙ্গে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন রাহানুমা।

 

এতে তিনি লেখেন, ‘আপনার মতো একজন বন্ধু পেয়ে ভালো লাগল, ঈশ্বর আপনাকে সর্বদা আশীর্বাদ করুন। আশা করি,  শিগগিরই আপনার সমস্ত স্বপ্ন পূরণ করবেন, আমি জানি আমরা একসঙ্গে অনেক পরিকল্পনা করেছি। দুঃখিত, আমাদের পরিকল্পনা পূরণ করতে পারিনি, ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন।’

তার আগের এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’

 

সহকর্মীরা যা বলছেন: রাহানুমা সারাহ জিটিভিতে নিউজরুম এডিটর ছিলেন। তিনি খুবই ভালো মনের মানুষ ছিলেন। কারো সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করেননি। তবে কেন, কী কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি।

সারাহর জিটিভির এক সহকর্মী বলেন, রাতে তিনি হাতিরঝিলে গাছের নিচে বসে ছিলেন এবং একজন গার্ড তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এত রাতে এখানে বসে আছেন কেন। তিনি বলেন, আমার গাড়ি আসবে, এলে চলে যাব। এর কিছুক্ষণ পরই কেউ একজন পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে বলে শুনতে পান।

 

সাংবাদিক রাহানুমা সারাহ গানের অনুরাগী ছিলেন। ‘রাহানুমার রূপকথারা কভার বাই সারাহ’ নামে অডিও ওয়েবসাইটভিত্তিক সাউন্ড ক্লাউডে আইডি ছিল। সেখানে ঢুকে বেশকিছু গানের লিস্টে পাওয়া যায়। রাহানুমার বন্ধু মেজবাহ উল আজিজ ফেসবুক স্টাট্যাসে জানান, কিন্নরকণ্ঠী গায়িকা। তার কাছ থেকে আমি বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট বাজানোর টিপস নিতাম। বিভিন্ন গানের প্রোপার সুর তাল কোনটা হবে সেগুলো শিখতাম।

সারাহর আরেক বন্ধু ফাহিম ফয়সাল লেখেন, আমার বন্ধুটা আর নেই, কাল রাতে শেষ কথা আমার সাথেই হয়েছিল। যদি বুঝতে পারতাম এটাই আমাদের শেষ কথা, তাহলে কখনও যেতে দিতাম না।