জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেছেন, ‘জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ মামলায় চার্জশিট দেওয়ার পর তা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। এ হত্যাকাণ্ডের মামলার সুষ্ঠু বিচারে সর্বোচ্চ নজর রাখা হবে। অতীতে যেসব সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, সেসব মামলাও দ্রুত শেষ করা হবে।’
রোববার (১৮ জুন) বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পদায়ন পাওয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের রিফ্রেশমেন্ট কোর্স উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, এ মৃত্যুর জন্য প্রথমেই আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি তার (সাংবাদিক নাদিম) পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। সমাজের প্রতিটি অপরাধই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, কিছু কিছু অপরাধ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। আমার মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি এই বলে যে, তদন্ত শেষ হওয়ার পর এ মামলা অবশ্যই দ্রুত বিচার আদালতে হবে। দ্রুততম সময়ে অবশ্যই ন্যায়বিচার এবং সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে যেখানে যাওয়া উচিত সেখানেই নেওয়া হবে।’
বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আনিসুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কখনও বিচার বিভাগ দলীয়করণ করেনি। ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে এরপর বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা বিচার বিভাগ দলীয়করণ করেছে।’
এর আগে সদ্য পদায়নকৃত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেছেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও টেকসই অর্থনীতির দেশ গঠনের মৌলিক ভিত্তি হলো শান্তি, স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন, যেগুলোর প্রতিটির সাথে ‘ন্যায়বিচার’ শব্দটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ন্যায়বিচার পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার।
ন্যায়বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, লুকাসের মতে, ন্যায়বিচার অনুগ্রহ, উদারতা, কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্ব এবং সহমর্মিতার থেকে পৃথক। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে, ন্যায়বিচার চারটি নাগরিক গুণাবলির একটি; অন্যগুলো হলো প্রজ্ঞা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সাহস। প্রত্যেক বিচারকের এসব গুণাবলি থাকা দরকার। কারণ, তাদের কলম দিয়ে নিত্যদিন ন্যায়বিচারের হাজারও বাণী ঝরে।
তিনি বলেন, বিচারকদের বিদেশি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক দেশীয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারকদের পদায়ন করার পর ম্যাজিস্ট্রেসি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। এবারই প্রথম বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সদ্য পদায়নকৃত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করেছে, যা চলতে থাকবে। ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়ানোর ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
এ সময় তিনি এই প্রশিক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং কোর্সটি আয়োজন করার জন্য ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানান। অক্টোবর, ২০১৭ থেকে এপ্রিল, ২০২৩ পর্যন্ত ৭২৫ জন বিচারককে ভারতের ভোপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমিতে সশরীরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও একটি আন্তর্জাতিক মানের জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ একাডেমিতে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, ডাক্তারসহ বিচারসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট নানা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একাডেমি স্থাপনের জন্য প্রকল্প এলাকায় ৩৭.৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। চিহ্নিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের বাজেটে ১৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি বিচারক নিয়োগে জোর দেওয়ার বিষয়ে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ১৩২৯ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ১৫তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০৩ জন এবং ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০০ জন বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।