জামালপুরের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে। নাদিম সম্প্রতি বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়াসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন বাবু। ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
শনিবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে নাদিম বাড়ি ফেরার সময় বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সহযোগীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওত পেতে থাকে। নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সহযোগীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে আরও কয়েকজন পেছন থেকে এসে তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। ওই সময় প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাবু ঘটনাস্থলের কাছে থেকে নেতৃত্ব দেন। সাংবাদিক নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সহযোগীরা তাকেও মারধর করেন। একপর্যায়ে ভিকটিম নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে বাবু ও তার সহযোগীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরের দিন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাদিম।
নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় নাদিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ চার আসামিকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এছাড়া, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল এ ঘটনার ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানায়। র্যাব ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি দল স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতায় শনিবার (১৭ জুন) ভোরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু (৫০), তার সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল (৩৫), জাকিরুল ইসলাম (৩১) ও রেজাউল করিমকে (২৬) গ্রেপ্তার করে। বাবুসহ অন্য আসামিরা সাংবাদিক নাদিম হত্যায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে পঞ্চগড়ে দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন বাবু। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগেও তার নামে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার রেজাউল, মনির এবং জাকির ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বাবুর সহযোগী।
সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে র্যাব।
ফেসবুক লাইভে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন নাদিম। এর পরেও তাকে এভাবে মরতে হলো কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কমান্ডার মঈন বলেন, সাংবাদিক নাদিম ফেসবুকে লাইভ করেছেন, নিরাপত্তা চেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ভালো বলতে পারবে। তবে, তিনি আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে আমাদের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল।
নাদিমের ওপর হামলায় কতজন জড়িত ছিলেন, জানতে চাইলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, মামলার এজাহারে ২২ জনের নাম উল্লেখ আছে। তবে, উদ্ধার করা সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখতে পেয়েছি ১০-১২ জনকে। সব আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হয়ত এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মামলার তদন্তে বিস্তারিত উঠে আসবে।