সাংবাদিক জহিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হয়রানীর অভিযোগ

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশীলী এক নেতার অনুগত এক ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রীকে প্রভাবিত করে দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহিরের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় শ্লীলতাহানি ও সম্মানহানির একটি মিথ্যা মামলা করেন।

 

গত চার বছরে ৫ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হলেও আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সাংবাদিক জহিরের অভিযোগ তাকে হয়রানী করতে উদ্দেশ্যে মুলকভাবে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে গড়িমসি করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

 

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাসেল সরদার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষন করেছে বলে অভিযোগ উঠে।

 

বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে ছাত্রলীগ নেতা স্কুল ছাত্রীর পরিবারকে মারধর করে স্ব-পরিবারে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেন। এ খবরএলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে । ছাত্রলীগ নেতার নিজ দলীয় প্রতিপক্ষ লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতার অপকর্মের এ ঘটনা প্রচার করেন ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করেন। বিষয়টি জানার পরে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জহির সত্যতা যাচাই করতে ২০১৮ সালের ২৯ জুন ভিকটিমের বাড়িতে যান।

 

ভিকটিম ও তার পরিবার ঘটনার সত্যতা স্বীকার না করায় সে ফিরে আসেন এবং সে কোন সংবাদ প্রকাশ করে নাই। এরই মধ্যে নিজ দলীয় নেতাদের চাপে ২০১৮ সালের ৯ আগষ্ট ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে করেন। কযেকজন সংবাদ কর্মীরা জানান, বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি, সরকারি অর্থ
আত্মসাত ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের নিউজ প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতা। ওই নেতা তার অনুসারি গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাসেল সরদারের স্ত্রীকে (১৭) দিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহিরকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলাটি খারিজ হয়ে যাওয়ায় রাসেল সরদার স্ত্রীকে (১৭) দিয়ে পুনরায় জহিরে প্রধান আসামি করে ৭ সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আসাদুজ্জামান ৭ মাস তদন্ত করে যেই পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হযেছে ওই পত্রিকার প্রতিনিধি এজাহারভূক্ত ৭ আসামিকে অব্যহতি দিয়েছেন।

 

প্রথম আলো পত্রিকায় সংবাদ ছাপা না সত্বেও প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জহিরকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ওই বছরের এপ্রিল মাসে চার্জ গঠন করলে আসামির পক্ষে অব্যহতি চেয়ে তার আইনজীবি আবেদন করেন।

 

চার মাসে শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক ২০১৯ সালের ২০ জুলাই আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামান মামলার সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন নাই। নথিতে দেখা গেছে, যার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমানপত্র নেই। কিন্তু যেই সাত আসামিকে অভিযোগপত্রে অব্যহতি দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমান রয়েছে।

 

এও দেখা যায়, জনৈক মোল্লা ফারুক হোসেন স্ব নামে নিউজ ছেপেছেন অথচ তাকে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। সুতারাং গৌরনদী মডেল ওসিকে নিজ দায়িত্বে মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হল।

 

আদালতের ওই নির্দেশের পরে গত তিন বছরে মামলাটি পুনঃ তদন্তে তিন ওসি দায়িত্ব পালন করলে কেউই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি। বর্তমানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন।

 

প্রথম আলোর গৌরনদী প্রতিনিধি জহির অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাটি ঘটনা পরেও ভিকটিম ও তার পরিবার ঘটনার সত্যতা স্বীকার না করায় আমি নিউজটি প্রকাশ করিনি। পূর্বে প্রকাশিত সংবাদের জেরে আমাকে জব্দ ও হয়রানী করতে স্কুল ছাত্রীকে প্রভাবিত করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়েছে।

 

গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার নির্দেশে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েই ক্ষেন্ত হননি মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা যারা নিউজ ছেপেছেন তাদের অব্যহতি দিয়ে আমাকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।

 

পরবর্তিতে পুনঃ তদন্তের জন্য আদালত ওসিকে নির্দেশ দেন কিন্তু চার ওসি বদল হলেও পুনঃ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিচ্ছেন না। আমাকে হয়রানী করতে উদ্দোশ্যমূলকভাবে আদালতে অভিযোগপত্র দিতে গড়িমসি করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসিরা।

 

আসামি পক্ষের আইনজীবি শেখ আব্দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য আদালত ওসেিক নির্দেশ দেন গত তিন বছরে চার জন ওসি বদল হলেও তারা কেউই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি।

 

গত বুধবার বিষয়টি বিজ্ঞ বিচারকে অবহিত করলে তিনি আগামি ধার্য্য তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, হয়রানীর অভিযোগ সঠিক নয়, কাজের ব্যবস্থতায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা এখনো হাতে পাইনি। পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।