কুমিল্লায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে হাত-পা ভেঙে দেয়া সাংবাদিক শরিফুল আলম চৌধুরীকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) সকালে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে সাংবাদিক শরিফুল আলম চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাকে রাখা হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের জেরে দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়ার বাহিনী সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেন। একই সঙ্গে সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যদের কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত শরিফুল আলম চৌধুরী কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের মুরাদনগর উপজেলা প্রতিনিধি। মাথায় গুরুতর আঘাত এবং হাত-পা ভেঙে দেয়ার কারণে তার অবস্থার অবনতি হয় বলে জানিয়েছেন শরিফুলের স্ত্রী রোমানা চৌধুরী।
এদিকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় আসামি নাছির ও কবির হোসেন মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে জেলহাজতে পাঠান বিচারক।
দুপুরে হাসপাতালে ছেলেকে দেখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হামলায় আহত শরিফুলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন চৌধুরী। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ছেলের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন চৌধুরী বলেন, আমার ছেলের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ক্ষত-বিক্ষত করেছে চেয়ারম্যানের লোকজন। চোখের সামনে ছেলেকে এমন নির্মমভাবে মারতে দেখেও রক্ষা করতে পারিনি। অর্থের অভাবে এখন চিকিৎসা হচ্ছে না ছেলের।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন চৌধুরী বলেন, এমন বর্বরতা ১৯৭১ সালে দেখেছি। আমার ছেলেকে ওরা গুলি করে মেরে ফেললে হয়তো আরও ভালো হতো। তার এমন যন্ত্রণা দেখতে হতো না। এলাকা থেকে খবর পেয়েছি চেয়ারম্যান শাহজাহান ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধন করিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার চাচ্ছি। কারণ বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিল আমি তখন একই ইউনিটে থেকে বিরোধিতা করায় আমাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। আমার ওপর অনেক হুমকি এসেছে। এরপরও আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি। কিন্তু নতুন করে আওয়ামী লীগের হাইব্রিড চেয়ারম্যান শাহজাহান আমাকে ও আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে চায়। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
শরিফুলের স্ত্রী রোমানা চৌধুরী বলেন, চিকিৎসকরা এখনও তাকে ওয়ার্ডে বেড দেয়নি। পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে। হাত-পায়ের ভেঙে যাওয়া অংশে বড় ধরনের অপারেশন লাগবে তার। এখন প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
মুরাদনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, যারা সাংবাদিক শরিফুলের ওপর হামলা চালিয়েছে, ঘটনার মদদ দিয়েছে তারাই আজ উল্টো এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় আসামি নাছির ও কবির হোসেন সকালে কুমিল্লার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে জেলহাজতে পাঠান বিচারক।
দুপুরে আহত সাংবাদিক শরিফুলকে দেখতে হাসপাতালে যান আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবীর ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মো. নুরুজ্জামান ভুট্টো। এ সময় নেতৃবৃন্দ শরিফুলের ওপর হামলাকারী ও নির্দেশদাতারা এলাকায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
এর আগে মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জেরে শনিবার শরিফুল আলম চৌধুরীর বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায় চেয়ারম্যান বাহিনী। এ সময় হাতুড়ি ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে শরিফুলের দুই হাত-পা ভেঙে ফেলা হয়। মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবা আবদুল মতিন চৌধুরী ও বৃদ্ধ মা আহত হন।
একই সময় একমাত্র বোনকেও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিক শরিফুল চৌধুরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন শরিফুলের বাবা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হলেও পরদিন জামিন পেয়ে যান।