বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে সশরীরে এবং অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে যাদের সক্ষমতা রয়েছে তারা চাইলে আপাতত অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারবে। আপাতত বন্ধ রাখা হবে সব আবাসিক হল। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকা প্রদান নিশ্চিত করে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সোমবার (৩১ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ভার্চুয়াল জরুরি বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিন দিয়ে খোলা হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হোক। তার ভিত্তিতে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একজন উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে আগামীকাল (১ জুন) থেকে যেকোনো দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে ক্লাস, পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে আবাসিক হল খোলা যাবে না। আবাসিক হল খুলতে হলে শতভাগ টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। আর দ্রুত এ টিকাদান নিশ্চিত করতে একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যাদের অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা নেয়ার সামর্থ্য আছে তাদেরকে ইউজিসির দেয়া সাতটি শর্ত অনুসরণ করতে হবে। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। এ কারণে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পিছিয়ে পড়া সেমিস্টারগুলো সম্পন্ন করা হবে।’
এই উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। তবে প্রথম ধাপে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্গে আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষার্থীদেরকে একটি কার্যক্রমে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম সোমবার (৩১ মে) রাতে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করা যায়, কবে থেকে খোলা হবে, কিভাবে সকলকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে সকল উপাচার্যরা উপস্থিত ছিলেন। সকলে এসব সিদ্ধান্তের সম্মতি জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘সকল সিদ্ধান্তগুলো একত্রিত করে আগামীকাল মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’
১. যেকোনো বিষয়ের তত্ত্বীয় ব্যবহারিক পাঠদান অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ার পর কালক্ষেপণ না করে তার চূড়ান্ত মূল্যায়ন অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। শুধু যেসব ব্যবহারিক কোর্সে হাতে-কলমে কাজ করা ছাড়া পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তা অবশ্যই সুবিধাজনক সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে সম্পন্ন করতে হবে।
২. মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সব বিষয়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সত্যিকারের মেধা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান পদ্ধতি ও স্কেল গ্রেড প্রদান করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের জন্য উপযোগী অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সুস্পষ্ট পদ্ধতি গ্রহণ করবে এবং বাস্তবতার নিরিখে সব সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করবে।
৪. যেকোনো তত্ত্বীয় বিষয় এবং হাতে-কলমে কাজ করার প্রয়োজন নেই, এমন ব্যবহারিক বিষয়ে চূড়ান্ত নম্বর অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে প্রদান করা যেতে পারে।
৫. ব্যবহারিক ক্লাসের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টের ভিডিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ইমেইলে এক্সপেরিমেন্টের পুরোনো ডেটা প্রেরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এসব ডেটা অ্যানালাইসিস করে সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে প্রদান করবে।
৬. ল্যাবভিত্তিক নয় এমন থিসিস অনলাইনে সুপারভিশন করা যেতে পারে। ল্যাবভিত্তিক থিসিসের সুপারভিশন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনলাইনে হতে পারে। থিসিসের হার্ড কপি গৃহীত হওয়ার পর অনলাইনে ভাইভা নেয়া যেতে পারে।
৭. অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট প্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয় স্পিড নিশ্চিত করা দরকার। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাতে পারে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমের মাধ্যমে এ সভা হয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, ইউজিসি চেয়ারম্যান, ইউজিসির সব সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।