সরকার ‘সুনীল অর্থনীতি’র ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

সরকার ‘সুনীল অর্থনীতি’র (ব্লু ইকোনমি) ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৬ মার্চ) মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪১তম ব্যাচের ক্যাডেটদের ‘মুজিববর্ষ পাসিং আউট প্যারেড’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা জয়লাভ করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ‘সুনীল অর্থনীতি’র ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। সমুদ্রকে ব্যবহার ও সমুদ্র হতে সম্পদ আহরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে এসডিজি-১৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করি, আমাদের সরকারের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তোমাদের ভূমিকা হবে অপরিহার্য।

ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদের আধার বঙ্গোপসাগর প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের জনগণের আমিষের চাহিদা মেটাতে মৎস্য সম্পদ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। তাই বঙ্গোপসাগর হতে মৎস্য সম্পদ আহরণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতসহ এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ দূষণরোধে তোমাদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। আশা করি, তোমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সমুদ্রসম্পদ আহরণ আরও বাড়বে। যা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করবে এবং একই সঙ্গে আমাদের সরকারের সুনীল অর্থনীতির লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করবে।

কর্ম জীবনে উন্নতির প্রধান ভিত্তি কঠোর পরিশ্রম, সততা, কর্মদক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা শিক্ষাঙ্গনের ক্ষুদ্র বলয় ছেড়ে পেশাগত জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশ করতে যাচ্ছো। আশা করি, সদা পরিবর্তনশীল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ আধুনিক এ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য এরই মধ্যে তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা নিজেদের তৈরি করে নিতে পেরেছো।

সরকার প্রধান আরও বলেন, জাতির পিতা আমাদের পৃথিবীর বুকে আত্মপরিচয় নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগানোর স্বপ্ন দেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মেরিন ফিশারিজ একাডেমির সার্বিক উন্নয়নে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবো।

তিনি বলেন, জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম মেরিটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’। কালক্রমে আজ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপ্তি স্ব-গৌরবে সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া মেরিন ফিশারিজ একাডেমির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। এসময় এর আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রথম মেরিটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের মেরিটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে শুরু করে। এসময় একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ, বিভিন্ন ল্যাবে সুবিধা বৃদ্ধি, সম্প্রসারিত লাইব্রেরি সুবিধা, আধুনিক প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ, পুরুষ ও নারী ক্যাডেট হোস্টেল এবং ভবিষ্যতে বিদেশি ক্যাডেট অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিদেশি ক্যাডেট হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ একাডেমি হতে পাস করা ক্যাডেটদের সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজে চাকরি লাভের সুযোগ হয়েছে এবং তাদের কর্মক্ষেত্র সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এ যাবত একাডেমি হতে সফলভাবে পাস করা ৫৮ জন নারী ক্যাডেটসহ এক হাজার ৯১৪ জন ক্যাডেট দক্ষতার সঙ্গে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মেরিটাইম সেক্টরে কর্মরত থেকে দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করছে।