সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কমসুদে গৃহঋণ কার্যকর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার জারি করা এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঋণের সদু হার ৫ শতাংশ। ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে বয়সসীমা করা হয়েছে চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর সর্বনিম্ন পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ ছাপান্ন বছর।
জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেডভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ম ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। এই ঋণ দিয়ে বাড়ি-ঘর নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয় করা যাবে। একক বা গ্রুপভিত্তিক ঋণ নেওয়া যাবে। তবে ফ্ল্যাট হতে হবে রেডিমেড। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবিরা ২০টি গ্রেডে বেতন পান। এ হিসাবে নিজ নিজ গ্রেড অনুযায়ী, নির্ধারিত সীমা মোতাবেক ঋণ সুবিধা পাবেন।
তবে যাদের নামে দুনীর্তি বা বিভাগীয় মামলা রয়েছে, তারা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঋণ পাবেন না।
এ ছাড়া, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে চাকরীজীবিদের ঋণসীমা বেশি এবং ঢাকার বাইরে জেলা শহরের জন্য কম নির্ধারণ করা হয়।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পয়লা জুলাই থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। এ জন্য এবারের বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
২০১৫ সালের জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়। এতে বেতন-ভাতা আগের চেয়ে প্রায় দ্ধিগুণ করা হয়। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবিরা বর্তমানে সুদমুক্ত গাড়িঋণ সুবিধা পাচ্ছেন। আগে যুগ্মসচিব ও তদুর্ধ্ব কর্মকর্তরা এ সুবিধা পেতেন। এখন উপসচিরাও গাড়ি কেনায় সুদমুক্ত ঋণ পান। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিমাসে তারা পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পান।
নীতামালায় যা বলা হয় : নতুন নীতিমালা অনুযায়ী উপ-সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার, (জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত) কর্মকর্তা যাদের মূল বেতন স্কেল ৪৩ হাজার টাকা বা এর বেশি, তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। তবে জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং জেলা সদরের বাইরে অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।
বেতন কাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত, যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
দশম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড, নয় হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃণনির্মাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সরকার অন্য যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
কারা আওতায় পড়বেন,কারা পড়বেন না : অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে,সরকারি চাকরিজীবিদের গৃহনির্মাণে ঋণের মাধ্যমে অর্থের জোগান দিতে এ নীতিমালা করা হলেও সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর ও কার্যালয়গুলোতে স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মচারীরাও এ সুবিধা পাবেন। তবে সামরিক, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকারি মালিকানাধীন কেম্পাণি, পৃথক বা বিশেষ আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন না।
অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে, সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ ব্যাংক থেকে এ ধরনের গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে তাদের ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনো কর্মচারী এ নীতিমালার আওতায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।
নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়, কোনো কর্মচারী ঋণ নেয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। এক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এরপরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।
এতে আরও বলা হয়,গৃহনির্মাণে প্রথম কিস্তি ঋণের অর্থ পাওয়ার এক বছর পর, ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ পাওয়ার ছয় মাস পর থেকে ঋণগ্রহীতা মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ শুরু করবেন। কোনো কারণে মাসিক কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে, বিলম্বের জন্য আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তির সঙ্গে যুক্ত হবে। যে ব্যাংক ঋণ দেবে, সেই ব্যাংকে তার মাসিক বেতনের হিসাব খুলতে হবে। তার বেতন-ভাতা ওই হিসাবে জমা হবে। ব্যাংক সেখান থেকে প্রথমে মাসিক ভিত্তিতে কিস্তির টাকা কেটে নেবে। পরে ঋণগ্রহীতা বেতন-ভাতার বাকি অর্থ হিসাব থেকে তুলতে পারবেন। ঋণগ্রহীতা অন্যত্র বদলি হলে তার হিসাবও সেখানে একই ব্যাংকের কোনো শাখায় স্থানান্তর করে নেবেন।