সমৃদ্ধ বনের সঙ্গে সমৃদ্ধ অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত: প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ, প্রাকৃতিক ভারসাম্যপূর্ণ সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাড়ির আনাচে-কানাচে, পতিত ও প্রান্তিক ভূমিতে, সড়কের ধারে ও সড়কদ্বীপে, বাড়ির ছাদে, শহর-বন্দর নির্বিশেষে সকল উন্মুক্ত স্থানে ব্যাপক বনায়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সমৃদ্ধ বনের সঙ্গে সমৃদ্ধ অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

 

 

৫ জুন ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা’ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৪ জুন) দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা, ২০২৪’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত জীবনের জন্য যেমন আর্থিক সমৃদ্ধি প্রয়োজন, তেমনই টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সবুজ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ নির্মল ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সবুজ বন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

 

তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৪’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ বছর জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ’ খুবই যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৃক্ষ অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশকে শীতল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের অপরিণামদর্শী ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের বিরূপ প্রভাবে দিন দিন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিবর্তন ঘটছে জলবায়ুর।

 

আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৃক্ষরোপণ ও বনায়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তিনি রমনার রেসকোর্স ময়দানে নারকেলের চারা রোপণের মধ্যে দিয়ে একটি উদ্যানের প্রবর্তন করেন, যার নাম দেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য ১৯৭২ সালে তিনি উপকূলীয় বনায়নের সূচনা করেন। দেশের উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য তিনি ১৯৭৫ সালের ১ জুলাই ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন।

২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বন সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণের বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত, অভিযোগ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। আমরা সরকারে এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বৃক্ষাচ্ছাদন বাড়ানোর জন্য সরকারি বনভূমিসহ প্রান্তিক ভূমিতে সামাজিক বনায়ন এবং উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে ওঠা চরভূমিতে উপকূলীয় বনায়ন কার্যক্রম শুরু করি। ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে ম্যানগ্রোভ বনসহ প্রায় ২ লাখ হেক্টর বনায়ন ব্লক এবং ২৮ দশমিক ৪৫৮ কিলোমিটার সরু বাগান সৃজন করা হয়। এছাড়া, আমরা বন সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মাধ্যমে অবক্ষয়িত বন পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের সরকারের নানামুখী সংরক্ষণ উদ্যোগের ফলে সুন্দরবনের কার্বন মজুদের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সুন্দরবনের মোট কার্বন মজুদের পরিমাণ ছিল ১০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন; যা ২০১৯ সালে ১৩৯ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। বিগত ১৫ বছরে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নকে আমরা বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছি। এর ফলে ২০১৪ সালে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদন ২২ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। বর্তমান এ হার প্রায় ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আমি আশা করি, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

 

তিনি বলেন, ‘এ বছরও জাতীয় পর্যায়সহ সারা দেশে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হচ্ছে এবং তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমি আশা করি, জনগণ মেলা থেকে উন্নত প্রজাতির চারা সংগ্রহ এবং এ বিষয়ে যথার্থ কারিগরি জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাবেন।’

প্রত্যেককে অন্তত একটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, আমরা প্রত্যেকে অন্তত একটি করে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে তার যত্ন নিই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গড়ে তুলি নির্মল, সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ আবাসভূমি।’

 

তিনি বলেন, যারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন ২০২৩ ও ২০২৪’; বৃক্ষরোপণ, বৃক্ষ সংরক্ষণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, চারা উৎপাদন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩’ পেয়েছেন এবং যেসব উপকারভোগী সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশ পেয়েছেন তাদেরকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।