“সবুজ বরগুনা”পায়রার পাড় এক দর্শনীয় স্থান

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

দুদিন আগেও অনেকটা অপরিচিত ছিল দর্শনীয় এই পায়রা পাড়। কিন্তু একদল তরুণ-কিশোরের উদ্যোগে তা এখন হয়ে উঠেছে, আলোচনা ও মুগ্ধতার বিষয়। পায়রা পাড়ের মতো এই তরুণ-কিশোরদের দুর্দান্ত উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে।এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বীচ নয়। বিভিন্ন রঙের দ্যূতি ছড়ানো এই জায়গা অনেকের কাছে—খুব একটা পরিচিতও নয়। তবে এটি ছোট ছিমছাম ও নিরিবিলি শহর বরগুনার হাতে গোনা কয়েকটি বিনোদনকেন্দ্রের অন্যতম একটি। নাম পালের বালিয়াতলী।

 

‘সবুজ বরগুনা’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে পায়রা-বিষখালী নদীর তীররক্ষা বাঁধ রাঙিয়ে তুলেছেন। পাথরের ব্লকে তাদের মাখানো রঙে উপকূলীয় জেলা বরগুনার পায়রা-বিষখালী মোহনা এখন হয়ে উঠেছে আরও দৃষ্টিনন্দন; আরও আকর্ষণীয়।

 

 

জেলা শহর থেকে পায়রা পাড়ের দূরত্ব রয়েছে। ৩০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত সুন্দর ও বাঙ্ময় জায়গাটি। দুই নদীর মোহনার প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাটি এখন ভ্রমণপিপাসুদের চোখ জুড়াচ্ছে। মূলত নদী ভাঙনের হাত থেকে নিরাপদ রাখতেই এই জায়গাকে ব্লক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাজটি সম্পন্ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর সেই ব্লকগুলোই নিজেদের উদ্যোগে রাঙিয়ে তুলেছে ‘সবুজ বরগুনা’।

 

 

সবুজ বরগুনার কার্যক্রমের শুরু বছর চারেক আগে। গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ তাদের। প্রথমে ৩৫ সদস্য নিয়ে কাজ শুরু হলেও বর্তমানে আছেন ২১ জন। যাদের বয়স ছয় থেকে আটত্রিশ।

 

নদীর তীর রাঙিয়ে তোলা ছাড়াও এই সংগঠনের সদস্যরা ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ৩০টির মতো বটগাছ লাগিয়েছে। যা একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে, অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলাকার মানুষের জন্য বুক পেতে দেবে।

সংগঠনের প্রশংসনীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর মোহনার বাকি থাকা অংশের ব্লক রাঙিয়ে দেওয়া, পাশাপাশি সেখানে যেতে প্রায় এক কিলোমিটারের মতো কাঁচা সড়ক উন্নত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

 

 

নদীর তীর রাঙিয়ে তোলার এই চিন্তা কীভাবে এলো সে প্রসঙ্গে ‘সবুজ বরগুনা’র প্রতিষ্ঠাতা আরিফ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবুজ বরগুনা মূলত শুরু থেকেই গাছ লাগানো ও বড় করার মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। তবে এবারই প্রথম ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার কারণ ছিল বেশ কয়েকটা। যেমন সমাজকে একটা বার্তা দেওয়া যে, আমরা চাইলেই খুব কম খরচে আমাদের আশেপাশের সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারি। আবার শহর এলাকায় প্রচুর সংবাদকর্মী এবং সচেতন মানুষ থাকেন। সে কারণে সেখানে যেকোনো অসংগতি খুব দ্রুত চোখে পড়ে এবং তা তুলে ধরা যায়। কিন্তু দূর্গম এলাকায় এই কাজের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন এলাকার সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে, অন্যদিকে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সবার কাছে এলাকাটির বিভিন্ন সমস্যা ধরা দিয়েছে। সেই অর্থে আমাদের কার্যক্রম আপাতত সফল বলা যায়। কারণ ইতোমধ্যেই এলাকাটির বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি “সবুজ বরগুনা” রাঙানোর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষার জন্য প্রচুর বটগাছও রোপণ করেছে।’

 

প্রতিষ্ঠানটি সূচনা থেকে ইতোমধ্যে বরগুনা শহর ও তার আশপাশে কৃঞ্চচূড়া, বকুল ও নিমগাছসহ নানা প্রজাতির ফলজ গাছ লাগিয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের অর্থায়নে গাছগুলো লাগানোর পর এগুলোকে সংগঠনের সদস্যরাই পরিচর্যা করে বড় করেছে। ইতোমধ্যে অনেক গাছ বড়ও হয়ে গেছে। আশা করছি, এই উদ্যোগ অন্য অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হবে।