সন্ত্রাসী তালিকার নাম কাটাতে সুদানের কাছে অর্থ চায় যুক্তরাষ্ট্র

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

সন্ত্রাসবাদে মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে নাম কাটাতে দারিদ্র্যপীড়িত সুদানের কাছে ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২২ বছর আগে আল-কায়েদার হামলায় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নাম করে আফ্রিকান দেশটির কাছে এ অর্থ দাবি করেছে মার্কিনিরা।

মঙ্গলবার সুদানিজ রাজধানী খার্তুম সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। দেশটির সাবেক বিতর্কিত শাসক ওমর আল-বশিরের পতনের পর দায়িত্ব নেয়া প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লা হামদকের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি, পাশাপাশি সুদানের নতুন সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথাও জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুদানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। তবে সন্ত্রাসবাদে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা থেকে দেশটিকে বাদ দেয়ার আগেই আইনি দাবি নিষ্পত্তি করতে চায় তারা। উত্তর কোরিয়া, ইরান এবং সিরিয়ার সঙ্গে এ তালিকায় ১৯৯৩ সাল থেকে নাম রয়েছে সুদানের। এর কারণেই তাদের জন্য বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরুরি আর্থিক সহায়তা।

১৯৯৮ সালে তানজানিয়া ও কেনিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে জোড়া বোমা হামলা চালায় আল-কায়েদা। এতে অন্তত ২২৪ জন প্রাণ হারান, আহত হন চার হাজারেরও বেশি মানুষ। পরে এ হামলায় তৎকালীন আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ায় সুদানকে দোষী সাব্যস্ত করে মার্কিন আদালত। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে ছিলেন লাদেন।

তবে সুদানের বর্তমান মন্ত্রী, বিরোধী নেতাসহ সাধারণ জনগণ অতীত স্বৈরশাসকের কর্মকাণ্ডের দায়ে কোটি কোটি ডলার জরিমানা গোণার রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া, দূতাবাসে হামলার সময় দায়িত্বরত সুদানিজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হাসান আব্দুলরহমান জানিয়েছেন, তারা লাদেনকে আটক করে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন মার্কিন প্রশাসনই এতে রাজি হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বশির সরকারের কয়েক দশকের দুঃশাসন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়েছে সুদানের অর্থনীতি। ফলে সুদানিজদের হাতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের দাবিতে রাজি না হওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, সুদানের প্রায় এক কোটি মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। গত জুনে সেখানে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩০ শতাংশ।

এছাড়া, বিতর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিপূরণ বিতরণের পদ্ধতি নিয়েও। তাদের দাবি অনুসারে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাপ্ত অর্থের প্রায় সবটাই পাবেন মার্কিন ভুক্তভোগীরা। কেনিয়া-তানজানিয়ার ভুক্তভোগীরা কিছু পাবেন না বললেই চলে।

সুদানের সমাজকর্মী মোহাম্মদ বাবিকার বলেন, ‘আমরা (বশির) সরকারের বিরোধিতা করে তা হটিয়ে দিয়েছি। এখন তারা কী ভুল করেছে তার জন্য আমাদের মূল্য দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এক স্বৈরশাসক যা করেছেন তার জন্য পুরো জাতিকে শাস্তি দেয়া অন্যায়। স্বৈরশাসক এই দেশটি জোর করে শাসন করেছেন এবং গোটা বিশ্ব তা দেখছিল। এখানে যে গণহত্যা ঘটেছে বা যে সন্ত্রাসবাদ চলেছে তা প্রতিরোধে কেউ কিছুই করেনি।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান