সন্তানদের নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি জাপানি মা-বাংলাদেশি বাবা

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

দুই মেয়ে শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে উন্নত পরিবেশে রাখতে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি জাপানি মা নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বাবা শরীফ ইমরান।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার (৩০ আগস্ট) রাত ৯টায় দুই পক্ষের আইনজীবী এবং এরিকো ও ইমরান জুম মিটিংয়ে যুক্ত হন। কিন্তু সমঝোতায় না আসতে পেরে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

বাবার পক্ষে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির মায়ের পক্ষে ছিলেন।

শিশির মনির বলেন, দুই মেয়েকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে মেয়েদের আরও উন্নত পরিবেশে রাখতে রাতে জুম মিটিংয়ে যুক্ত হই। কিন্তু বাবার পক্ষ চাচ্ছে তাদের বাসায় রাখতে। আর মায়ের পক্ষ বলছে একটি আলাদা বাসা ভাড়া করে মেয়েদের তার মা রাখবেন। কিন্তু কোনো পক্ষই এসব বিষয় নিয়ে একমত হয়নি।

এর আগে শিশির মনির জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি আইন অনুসারে বিয়ে করেন নাকানো এরিকো ও শরীফ ইমরান। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তাদের তিনটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

তারা হলো- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (৭)। এই তিনজন টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল। আর মা এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক।

 

সবশেষ চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি তিনি তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব নাকচ করে।

পরে স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। কিন্তু একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন ইমরান।

এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন ১৭ ফেব্রুয়ারি। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন ও লিনাকে এরিকোর অনুকূলে জিম্মা দিতে আদেশ দেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তার সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। তবে গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি মা এরিকো।

এরপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট ওই দুই শিশুকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এক মাসের জন্য তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

এর মধ্যে ২২ আগস্ট রাতে দুই শিশুকে হেফাজতে নিয়ে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে সিআইডি।

পরদিন ২৩ আগস্ট বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। দুইপক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন। আদেশে তাদের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখতে বলেন।