সদরঘাট থেকে ৪১ রুটে নৌচলাচল বন্ধ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago
সদরঘাট টার্মিনাল

ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে সকাল নয়টা থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ৪১টি রুটে নৌচলাচল বন্ধের এ নির্দেশ বহাল থাকবে। বর্তমানে সব নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত জারি রয়েছে।

নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. নাদিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত অব্যাহত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা নদীবন্দর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশ বহাল থাকবে।

এদিকে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের টার্মিনাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে। আবদুল আজিজ আমতলী যাওয়ার জন্য সদরঘাটে এসেছিলেন। কিন্তু লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় এখন সড়কপথে যেতে হবে তাঁকে। আজিজ বলেন, ‘আজ সুন্দরবন লঞ্চে বুকিং দিয়েছিলাম। কিন্তু আসার পর শুনলাম লঞ্চ চলবে না। এখন সড়কপথে যাব ভাবছি।’

বরিশালের যাত্রী মেহেরুন্নেসা বেগম বলেন, ‘শুক্রবার বৃষ্টি থাকায় যেতে পারিনি। আজ এসেছিলাম। কিন্তু লঞ্চ না ছাড়ায় টঙ্গীতে আত্মীয়ের বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে।’

সুন্দরবন লঞ্চের পরিচালক মো. ঝন্টু মিয়া বলেন, বরিশাল, আমতলী ও পটুয়াখালী রুটে তাঁদের তিনটি ট্রিপ চলার কথা ছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।

চাঁদপুর নৌবন্দরে ২ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় আজ শনিবার বেলা তিনটার পর থেকে সব ধরনের নৌচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ অফিস সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তবে সকালে এই নৌবন্দর থেকে প্রায় ১৫টির মতো লঞ্চ ছেড়ে যায়।
এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল রুটে দ্রুতগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ গ্রিন লাইন-২ চাঁদপুর-মেঘনা মোহনা অতিক্রম করার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে কোনো হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. ইমরান বলেন, প্রচণ্ড বাতাসে বিকট শব্দে প্রথমে লঞ্চের সামনের অংশের কাচ ফেটে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই লক ভেঙে প্রধান গেটটি খুলে যায় এবং ভেতরে পানি ঢুকতে থাকে। পরে চালক বাধ্য হয়ে চাঁদপুর স্টিমার ঘাটে লঞ্চটি ভিড়িয়ে ফেলেন। লঞ্চে মোট দেড় শ-জন যাত্রী ছিল।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রিন লাইন-২ চাঁদপুর ঘাটে আছে। যাত্রীদের অন্য লঞ্চের মাধ্যমে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ পুলিশের ওসি আবুল হাসিম বলেন, ঝড়ের কবলে পড়লেও এখন লঞ্চটি নিরাপদ রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কয়েকটি নৌপথে লঞ্চ চলাচল সাময়িক স্থগিত করেছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আজ শনিবার দুপুরে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল-ভোলা, ইলিশা-মজুচৌধুরিহাট, ভোলা-ঢাকা নৌপথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা সরকার আজ দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদ-নদী উত্তাল থাকায় এ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
একই সঙ্গে বরগুনা-ঢাকা, বরগুনা-আমতলী পথে ও এই জেলার অভ্যন্তরীণ সব পথে নৌচলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বরগুনা নৌবন্দরের বন্দর কর্মকর্তা মামুন-অর-রশিদ বলেন, দুপুর ১২টার পর বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এদিকে গত দুই দিনের মতো শনিবার সকাল থেকেই বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের সব জায়গায় ঝোড়ো আবহাওয়া ও বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. আনিসুর রহমান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে আজ সকাল ছয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) ও চাঁদপুর প্রতিনিধি

সূত্রঃ প্রথম আলো।