সঙ্কটেও পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকে

:
: ৭ years ago

২০১৭ সালে বছরের শুরু থেকেই ব্যাংকিং খাতে চলে নানা অব্যবস্থাপনা। উদ্বৃত্ত তারল্য ও রয়েছে খেলাপি ঋণের বোঝা। বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন হয়েছে বেশকিছু ব্যাংকে। তারপরও বিদায়ী বছরে ভালো পরিচালন মুনাফা করেছে বেশিরভাগ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো জানায়, এবার ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার বড় অংশই এসেছে কমিশন, সার্ভিস চার্জ, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার আয় থেকে। ব্যাংকের আয়ের প্রধান খাত সুদ হলেও এবার এই খাত থেকে আদায় হয়েছে খুবই কম। যে কারণে মুনাফার অঙ্ক খুব বেশি বাড়েনি। অনেক ব্যাংক হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকির মাধ্যমে মুনাফা বাড়ালে নিট মুনাফা কম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিছু চ্যালেঞ্জের পরও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যাংকগুলোর চেষ্টার কারণে এবার বেশিরভাগ ব্যাংক ভালো মুনাফা করেছে বলেছেন ব্যাংকাররা।

বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ডিসেম্বরের শেষে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা বেড়েছে। তবে বরাবরের মতোই বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে। এ বছর ব্যাংকটি ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে বলে জানা গেছে। গত বছর ছিল দুই হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে ৭১১ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ৬৫০ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ৩২৬ কোটি টাকা।

ইস্টার্ন ব্যাংক বিদায়ী বছরে মুনাফা করে ৭৫০ কোটি টাকা। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে হয়েছে ৮০৯ কোটি টাকা, গত বছর ছিল ৭৫৪ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে ৬৬০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬০১ কোটি টাকা। আইএফআইসি ব্যাংক ২০১৭ সালে মুনাফা করেছে ৫০৪ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ৪৫০ কোটি টাকা।

ব্যাংক এশিয়ার মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬৭০ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ৫৯০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭১১ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৫০৮ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে পূবালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯১৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭২০ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ছিল ৪৭০ কোটি টাকা।

ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ২৩০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। ডাচ বাংলা ২০১৬ সালে মুনাফা করেছে ৫৫২ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ কোটি টাকায়। যমুনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৮৫ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৪২২ কোটি টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩৬০ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটি মুনাফা করে ২৯৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়াও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৭০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৩৭২ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা করেছে ৩৬০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ২০১৬ সালে মুনাফা করেছিল ২৯৭ কোটি টাকা।

গত বছর ১০০ কোটি টাকা লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫১১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। অগ্রণী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯৫০ কোটি টাকা।

নতুন ব্যাংক
বছর শেষে নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করলেও নানা সঙ্কটে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের মুনাফা কমেছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে মাত্র ২৬ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৯২ কোটি টাকা।

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ১৮২ কোটি টাকা; ২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ১৫৪ কোটি টাকা।

মেঘনা ব্যাংকের মুনাফা ১১০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ১০২ কোটি টাকা। এনআরবি গ্লোবাল মুনাফা করেছে ১৬১ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৯৫ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০১ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ছিল ১৭১ কোটি টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ১০৮ কোটি টাকা। এনআরবি ব্যাংক ২০১৭ সালে পরিচালনা মুনাফা করেছে ৯৭ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৯২ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ২৩০ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ২৩০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ১৬৫ কোটি টাকা।

পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকগুলোকে আগে নিয়মিত ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হবে। নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ১ থেকে ২ শতাংশ, খেলাপির মধ্যে নিম্নমান ঋণে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। এর পরে মূলধন বাড়াতে তহবিলের একটি অংশ নিতে হবে রিজার্ভ তহবিলে। পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ৪১ শতাংশ হারে আয়কর। এরপরে যা থাকবে তা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া যাবে।

পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত আয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) এবং কর (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ) বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করা হয়। এর ওপরও ব্যাংক বিশেষে সাধারণ রিজার্ভ খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়।

ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীকে অপেক্ষা করতে হবে নিট বা প্রকৃত মুনাফার হিসাব পাওয়া পর্যন্ত। আবার অনেক ক্ষেত্রেই নিট মুনাফা হলেও তার সম্পূর্ণ অর্থ লভ্যাংশ আকারে বিতরণ করা হবে না।