সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়: সিইসি

:
: ৮ মাস আগে

নির্বাচন প্রশ্নে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, পারষ্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। পরমতসহিষ্ণুতা, পারষ্পরিক আস্থা, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যকীয় নিয়ামক।

 

বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি এসব কথা বলেন।

সিইসি বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নে, বিশেষত নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রশ্নে, দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বহুদলীয় রাজনীতিতে মতাদর্শগত বিভাজন থাকতেই পারে। কিন্তু মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

 

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি আরও বলেন, সরকার আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যক্ত করেছে। কমিশনও তার আয়ত্তে থাকা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে এবং সরকার থেকে আবশ্যক সব সহায়তা নিয়ে নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।

সংবিধানে সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এ নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে সম্পন্ন করে থাকে।

 

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারে কেবল সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমেই। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে কার্যকরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়, নির্বাচন আরও পরিশুদ্ধ ও অর্থবহ হয়। তাতে জনমতেরও শুদ্ধতর প্রতিফলন ঘটে।

সিইসি তার ভাষণের শেষ দিকে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও জনগণের অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন।

 

 

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল এমন সময় ঘোষণা করা হলো, যখন রাজপথের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো সরকার পতনের আন্দোলন করছে। এরইমধ্যে জোরালো আলোচনা উঠেছে, রাজনৈতিক সমঝোতার। দাবি উঠেছিল, সংলাপ আয়োজনের। সবশেষ শর্তহীন সংলাপের উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে সংলাপে বসতে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

সংলাপ চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে গত রোববার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানোর পরদিন ইসি জানিয়ে দেয়, মার্কিন চিঠিতে তফসিল ঘোষণায় কোনও প্রভাব পড়বে না। তফসিল ঘোষণা করার জন্য সিইসির জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও উঠে এসেছে রাজনৈতিক সংকটের বিষয়।

 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে হয়। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ দফা (৩) উপদফা (ক)-এর বরাতে এবং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন সিইসি।