বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে চলতি মাসেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে সরকার। ওই রিভিউ পিটিশনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পুরো রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ বাতিল চাওয়া হবে। পাশাপাশি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বাতিল করে সংসদ কর্তৃক বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পুনর্বহালের আবেদন জানানো হবে ওই পিটিশনে। রায় পর্যালোচনা কমিটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এই কমিটির প্রধান হচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সূত্র জানায়, রায়ের পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জের জন্য পৃথক কোন পিটিশন দাখিল করবে না রাষ্ট্রপক্ষ। রিভিউতেই রায়ের পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ চাওয়া হবে।
শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আজ দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অতিরিক্ত দুই অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মমতাজউদ্দিন ফকিরসহ সাতজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আপিল বিভাগের রায় বাতিলের জন্য কি কি আইনগত যুক্তি তুলে ধরা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনগত যুক্তির একটা খসড়াও চূড়ান্ত করেছে রায় পর্যালোচনা কমিটি। আজ ওই খসড়াটি আইনমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রিভিউ পিটিশনে রায় বাতিলের যুক্তিগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য আমরা বসেছিলাম। মোটামুটি যুক্তিগুলো চূড়ান্ত করেছি। এখন রিভিউ পিটিশন দাখিল করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ মাসের মধ্যেই তা দাখিল করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা রিভিউতে পুরো রায় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করছি। রায়টা যে ঠিকমতো হয়নি, সেটার কথাই বলছি। এখানে কিছু এক্সপাঞ্জ করার কথা নিশ্চয়ই থাকবে। কি কি আইনগত যুক্তি রিভিউ পিটিশনে তুলে ধরা হচ্ছে তা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মুহূর্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। সূত্র জানায় চলতি সপ্তাহে এই আইনগত যুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করে রিভিউ পিটিশন প্রস্তুত করা হবে।
উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে গত ৩ জুলাই রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ। পুনর্বহাল করা হয় সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান। রায় ঘোষণার দু’দিন পরেই এর সার্টিফায়েড কপি নেওয়ার জন্য আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন দাখিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। গত পহেলা আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। রায় প্রকাশের দুই মাস পর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে রায়ের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসঙ্গত, রিভিউর আবেদন করার সময় হচ্ছে রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে। সেই হিসাবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হবে সরকারকে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। রায়ে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্র ও সমাজ, সামরিক শাসন, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন ও সংসদ ও বিচার বিভাগ নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণ দেন। কড়া সমালোচনা করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আমি ও আমিত্ব’-এর সংস্কৃতির। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরাও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে তাদের অভিমত তুলে ধরেন রায়ে। এরপরই ওই রায় ও রায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেন সরকার ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। তাতে যোগ দেয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলও। এমনকি সরকার ও সরকারপন্থী বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারাও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সরব হন। পাশাপাশি রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া পর্যবেক্ষণও স্বত:প্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এছাড়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়।