টেস্ট সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে শুরুতেই। ব্যর্থতার মিছিলে যোগ হয় ওয়ানডে সিরিজও। বাকি ছিল কেবল টি-টোয়েন্টি।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো দল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জিতে সিরিজে ১-১ এ সমতা ফেরায়। থামে সমালোচনা। খুলে যায় সিরিজ জয়ের দরজা।
শেষ ম্যাচে যারা জিতবে তারাই উড়াবে বিজয়ের পতাকা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কখনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ না জেতা বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিল নতুন কিছুর। কলম্বোতে সেই স্বাদটাই পেয়ে গেল বাংলাদেশ। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজে পিছিয়ে পড়ার পর সিরিজ জয়ের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে পিছিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিতে নেয়।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশ লক্ষ্য নাগালে রেখেছিল। শ্রীলঙ্কার লম্বা ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামিয়ে তাদেরকে ১৩২ রানে আটকে রাখে। তুলনামূলক সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুতে হোঁচট খেলেও তানজিদের ঝড়ো ব্যাটিং, লিটনের দায়িত্বশীল ইনিংস ও তাওহীদের জমাট ব্যাটিংয়ে সহজেই ২১ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন তানজিদ। ৪৭ বলে ১ চার ও ৬ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। এছাড়া বোলিংয়ে একাদশে সুযোগ পাওয়া মাহেদী হাসান ৪ উইকেট নিয়ে ছিলেন দলের সেরা।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম বলেই আউট হন পারভেজ হোসেন ইমন। ১৫ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার ডাক ৫টি। ৩টিই আবার গোল্ডেন। পেসার নুয়ান থুসারার লেন্থ বলে ব্যাট ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন পারভেজ। এরপর সতর্ক ব্যাটিংয়ে দলের রান এগিয়ে নিয়েছেন লিটন ও তানজিদ। পাওয়ার প্লে’তে বাউন্ডারি খরায় ভুগলেও কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ৬ ওভারে ১ উইকেটে রান ৪৭।
তানজিদের পরের ঝড়ে সব ওলটপালট। স্পিনার চারিথ আসালাঙ্কাকে একই ওভারে দুই ছক্কা হাঁকান লং অনের ওপর দিয়ে। লেগ স্পিনার ভানডারসেকে উড়ান মিড উইকেট দিয়ে। তাতে স্কোরবোর্ডে গতি আসে। দারুণ এই ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় দশম ওভারে ছক্কা ও চার উড়িয়ে ২৭ বলে ফিফটি তুলে নেন তানজিদ। ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৮৯।
তানজিদের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ বলে ৭৪ রানের জুটি গড়ে লিটন আউট হন ৩২ রানে। আগের ম্যাচের নায়ক লিটন ২৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। লিটন আউট হলেও তৃতীয় উইকেটে তানজিদ ও তাওহীদের ৪৮ বলে ৫৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় চলে আসে অতি সহজে। ১টি করে চার ও ছক্কায় ২৫ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তাওহীদ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার রানের চাকায় লাগাম টেনে ধরেন বোলাররা। বিশেষ করে মাহেদীর স্পিনে দিশেহারা হয়ে যান ব্যাটসম্যানরা। অফস্পিনারের ভেল্কিতে ১০.৩ ওভারে ৬৬ রান তুলতে শ্রীলঙ্কার অর্ধেক ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। ৪ ওভারে ১ মেডেনে ১১ রানে ৪ উইকেট নেন মাহেদী। এছাড়া নতুন বলে শুরুতে উইকেট এনে দেন শরিফুল ইসলাম। তিনি ফেরান কুশল মেন্ডিসকে।
শুরুর ওই ধাক্কা হজমের পর শ্রীলঙ্কা শেষ ওভারের আগ পর্যন্ত তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতাই করতে পারেনি। ১৯ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ৭ উইকেটে ১১০। শরিফুল ইনিংসের শেষ ওভার করতে এসে খরচ করেন ২২ রান। দুই চারের সঙ্গে দুই ছক্কা হজম করেন দাসুন শানাকার ব্যাটে। তাতে স্কোরবোর্ডের চিত্রও পাল্টে যায়, ১৩২।
শুরুতে নিশাঙ্কার ৪৬ এবং শেষে শানাকার ৩৫ রানের ইনিংসে লড়াই করার পুঁজি পায় স্বাগতিকরা। ২৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় শানাকা অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত। মাহেদীর ৪ উইকেটের সঙ্গে ১টি করে উইকেট নেন শরিফুল, মোস্তাফিজুর ও শামীম।
২০১৭ সালের পর এবার পূর্ণাঙ্গ সফরে শ্রীলঙ্কা গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া হওয়ায় প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ ছিল পুরো দল। সফরের শুরুতে ও মাঝে নিজেদের ছন্দে থাকতে পারেননি ক্রিকেটাররা। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে খানিকটা মান রাখতে পাল। শেষটা রাঙিয়ে প্রাপ্তির খাতায় দাগ কাটতে পারল অন্তত। ছয়বারের দেখায় প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।