শোলাকিয়ায় ‘স্মরণকালের সর্ববৃহৎ’ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

শনিবার ভোর থেকেই মেঘলা আকাশ। এরপর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এক পশলা বৃষ্টি। এই বৃষ্টি মাঠে আসা মুসল্লিদের শীতল প্রশান্তি দিয়ে মুহুর্তেই থেমে গেল। এ যেন সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমত।

এমন মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া ও নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে শনিবার সকালে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। শোলাকিয়ায় এটাই স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা।

১৯১ তম এই জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশেনের সাবেক পরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

সকাল ১০টায় নামাজ শুরুর কথা থাকলেও নয়টার আগেই মাঠ কানায়-কানায় ভরে যায়। পরে সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যেই মুসল্লিদের ভিড়ে মাঠের আশপাশের বাড়ি-ঘরের উঠান ও খালি জায়গা এবং বিভিন্ন সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

জেলা প্রশাসক মো.সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম, জেলার বিভিন্ন বিভাগের উধ্বর্তন কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রাজনীতিবিদ, জন প্রতনিধিসহ ৫ লাখেরও বেশি মুসল্লি এবার শোলাকিয়া নামাজ আদায় করেন। শোলাকিয়ায় নামাজ পড়ার জন্য গত কয়েকদিন ধরেই গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা কিশোরগঞ্জে আসতে শুর করেন। অনেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, আবাসিক হোটেল, মাঠের আশপাশের মসজিদ এবং ঈদগাহের খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেন তারা।

এছাড়াও শনিবার ভোররাত থেকেই ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও পায়ে হেঁটে কিশোরগঞ্জে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। তাদের সবারই গন্তব্য ছিল ঐতিহাসিক শোলাকিয়া।

এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে শোলাকিয়ায় আগত মুসল্লিদের যাতায়তের সুবিধার্তে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল এক্সপ্রেস ট্রেন‘ নামে দু‘টি বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা নেয়। ট্রেন দুইটি ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে সকালে ছেড়ে আসে। সকাল পৌনে ৯টার মধ্যে ট্রেন দুটি কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনে এসে পৌঁছে। পরে দুপুর ১২ টায় আগত মুসুল্লিদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও মযমনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেন দুটি।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে আসা মো. সাদেক আলী (৫০), সুনামগঞ্জের শাল্লার আহাম্মদ মিয়া (৫৫), সিলেটের রমজান আলী (৫৫), যশোর থেকে আসা মো. এবাদুল হক (৫৭) এবার শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন। তারা বলেন, দীর্ঘদিনের ইচ্ছা আল্লাহ আজ কবুল করেছেন। নামাজ পড়ে খুব শান্তি পেয়েছি।

মুসল্লিরা আরও বলেন, একাধিকবার নিয়ত করেছি শোলাকিয়ায় নামাজ পড়ার, আসা হয়নি। আল্লাহ এবার ইচ্ছা পুরণ করেছেন। বিশেষ ফরিয়াদে এখানে এসেছি। নিশ্চয় আল্লাহ কবুল করবেন।

অন্যদিকে মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিপুল সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ছিল ড্রোন ক্যামেরাও। এছাড়াও র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ, ডিবি ও সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মাঠ ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর সংকেত দেয়া হয়।

নামজের আগে বয়ানে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ স্বাধীনাতা যুদ্ধে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। নামাজ শেষে দেশের শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ সকল রাজনীতিবিদের দীর্ঘায়ু ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।

মাঠ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, শোলাকিয়ায় এ বছর পাঁচ লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।