শোক-শ্রদ্ধায় হকির টাইগারকে বিদায়

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়ার মরদেহের সামনে রেখে যখন স্মৃতিচারণ করছিলেন তারই সতীর্থদের অনেকে তখন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের এক কোনায় অঝোরে কাঁদছিলেন রাসেল মাহমুদ জিমি। জাতীয় দলের অন্য কয়েকজন খেলোয়াড় সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন জিমিকে। কিন্তু পিতা হারানোর সান্ত্বনা কি আর হয়? ‘বাবা অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। বিছানায় ছিলেন। তারপরও বাসায় গিয়েতো আমি বাবা বলে ডাকতে পারতাম। বাবা তোমার এখন কেমন লাগছে জানতে চাইতাম। কিন্তু এখন তো আর বাবা বলে ডাকতেও পারবো না’ -বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন জাতীয় দলের এ অধিনায়ক।

ভাসানী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জানাজার নামাজ শেষে যখন বাবার মরদেহ কাঁধে নিয়ে বের হচ্ছিলেন তখনও দু’চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছিল জিমির। কেবল জিমিই নন, জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় আব্দুর রাজ্জাক সোনা মিয়ার মরদেহ ভাসানী স্টেডিয়ামে আনার পর অনেকেই চোখের পানি ছেড়েছেন। তাদের কেউ ছিলেন সোনা মিয়ার খেলার সাথী, কেউ তারই হাতে গড়া খেলোয়াড়। কেউ আবার সহকর্মী।

সাবেক-বর্তমান অনেক খেলোয়াড়, ক্লাব কর্মকর্তা, সংগঠন, হকির শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই ভাসানী স্টেডিয়ামে এসেছিলেন হকি অঙ্গনের পরিচিত মুখ সোনার মিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের স্মৃতিচারণেই ফুটে ওঠেছে খেলোয়াড় হিসেবে কেমন ছিলেন সোনা মিয়া। কেমন ছিলেন মানুষ হিসেবে।

বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেকেরই বেশি স্মৃতি জড়িয়ে জিমির বাবার সঙ্গে। পুরোনো ঢাকার আরমানিটোলায় এক সঙ্গেই খেলেছেন তারা। এক সঙ্গে খেলেছেন আবাহনীতেও। পূর্ব পাকিস্তান দলের ট্রায়ালও দিতেন এক সঙ্গে। সহকর্মী ছিলেন হকি ফেডারেশনেও।
sona mai

সোনা মিয়াকে কেন হকির টাইগার বলা হতো? কিভাবে তার নামের আগে যোগ হলো এ বিশেষণ? আবদুস সাদেক জানালেন, ‘সোনা মিয়া ছিলেন অত্যন্ত গতিশীল। ঝড়ের গতিতে প্রতিপক্ষের সীমানায় ঢুকতেন। তারভীর দার নামের পাকিস্তানের তৎকালীন এক খেলোয়াড়ই প্রথম টাইগার বলেছিলেন তাকে।’

মানুষ হিসেবেও অনন্য ছিলেন সোনা মিয়া। একই সঙ্গে জাতীয় দলে খেলা হোসেন ইমাম চৌধুরী সান্টার মুখেই জানা যাক ‘আসলে সে সিনিয়র-জুনিয়র সবার সঙ্গেই মিশতে পারতো। আমরা অনেক বলতাম-ছোটদের সঙ্গে এভাবে মিশো কেন? সে বলতো আমার ভালো লাগে।’

বেশ কয়েকবার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল সোনা মিয়ার। গত বছর ৫ ডিসেম্বর স্ট্রোকে তিনি বিছানায় পড়ে যান। ১৭ থেকে ২৬ জানুয়ারি হাসপাতালে থেকে একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এ কোচ ও খেলোয়াড়।

কান্না জড়িত কণ্ঠে জিমি বলেন, ‘শনিবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। হাত-পা ঠান্ডা দেখে ডাক্তারও ডেকে এনেছিলাম। সকালে যখন কোনো কথা বলছিলেন না, তখন হাসপাতালে নিয়ে যাই। আসলে বাবা তার আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’