তামজিদ সুলতান মাহির বয়েস সবে ১৫। হাসি-খেলার বয়স। এ বয়সেই একের পর আঘাত সইতে হচ্ছে তাকে। বাবা আবিদ সুলতানকে হারিয়েছে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায়। স্বামীর শোকে কাতর মা আফসানা খানমও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বাবা কবরে, মা মৃত্যুশয্যায়—এ কষ্ট কেমন করে সইবে মাহি।
গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। স্বামীর মৃত্যুর কষ্ট সইতে না পেরে গত শনিবার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয় আফসানা খানমের। লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাকে।
আবিদ-আফসানা দম্পতির একমাত্র সন্তান তামজিদ সুলতান মাহি। বাবার মরদেহ নিতে সোমবার নানার সঙ্গে আর্মি স্টেডিয়ামে আসে মাহি; কিন্তু নিতে পারেনি। খবর আসে, মায়ের অবস্থা গুরুতর। বাবার লাশ না নিয়ে হাসপাতালে ছোটে মাহি। এর আগে কথা হয় তার সঙ্গে। কষ্টমাখা অশ্রুসজল চোখ বলছে, মাহি ভালো নেই। ভেতরে ভীষণ দুঃখের তোলপাড়। কথা আর বাড়ল না।
মাহির চাচা খুরশিদ মাহমুদ বললেন, এই অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছে। মায়ের অবস্থাও ভালো নয়। মাহির মনের অবস্থা বুঝতেই পারছেন। ছোট মানুষ, কিন্তু কান্নাকাটি করছে না। শোকে একেবারে নীরব হয়ে গেছে। কী বলে ওকে সান্ত্বনা দেব, ভাষা নেই।
এর মধ্যেই মাহির নানার ফোনে খবর এলো আফসানা খানমের অবস্থা গুরুতর। নাতিকে নিয়ে ছুটলেন আগারগাঁওয়ের হাসপাতালে।
আবিদ সুলতানের ভাই মরদেহ গ্রহণ করেন। আর্মি স্টেডিয়াম থেকে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী সামরিক করবস্থানে। সেখানে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয় বিমানবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তাকে। কবরে লাশ নামানোর আগে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন কফিন জড়িয়ে; কিন্তু মাহি নীবর। নীরবে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলল। আহাজারি করল না। দাফনের পর মাহিকে মিরপুরে তার খালার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ফেরা হলো না নিজ বাড়িতে: উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর ভবনের বাসায় ফেরা হলো না ক্যাপ্টেন আবিদের। এই ভবনের তৃতীয় তলায় সপরিবারে বাস করতেন তিনি। এ বাসা থেকেই ১২ মার্চে নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে আর ফেরা হলো না তার। তার মরদেহও বাসায় নেওয়া হয়নি। সোমবার বিকেলে ৩৮ নম্বর ভবনের সেই বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।