বছর ঘুরে ফের এসেছে শোকাবহ আগস্ট। পিতা হারানোর কান্নায় অশ্রু হয়ত কোনোকালে শুকিয়ে গেছে, তবে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আজও আছে। সেই ক্ষরণে যে দহন বাঙালির ধমনিতে, তা মিটবে কিসে?
বাঙালির আকাশে সেই যে আঁধার নেমেছে, তা আজও ঘোচেনি। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকের বাংলাদেশ, জাতি এগিয়েছে বহুদূর, এগিয়েছে বিশ্ব সভ্যতাও। কিন্তু বাঙালির পূর্ব আকাশের যে সূর্য উদিত হওয়ার প্রাকলগ্নেই অস্ত গেল, তা আজও অমানিশার ঘোরে আটকা। পিতাকে হারিয়ে জাতি আজও হাতড়ে বেড়ায়ে সঙ্কটের প্রতি ক্ষণে।
বাঙালির ইতিহাসে বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছে হাজার বছর ধরে। হাজার বছরের বিদ্রোহের আগুনের সন্নিবেশ ঘটিয়ে জন্মেছিলেন টুঙ্গীপাড়ার সেই ছেলেটি। যার জন্মদিবসে ধরণীতে সূর্য ছড়িয়েছিল মুক্তির আভা। যার জন্ম মানেই শোষিতের জয়গান আর শোষকের প্রস্থান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনো সীমারেখায় আটকে যে নামের বন্দনা করা যায় না। তিনি জন্মেছিলেন বাঙালির মুক্তির তাগিদেই। তবে শুধু জাতিসত্ত্বার প্রশ্নেই নয়, তিনি এসেছিলেন মানবমুক্তির কেতন উড়িয়ে।
বঙ্গবন্ধু মানেই বাঙালি, বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই বঞ্চিত মানুষের মুক্তির ঠিকানা। অথচ মানবতার সেই মুক্তির দূতকেই হারতে হয়েছে মানবের কাছে।
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সাল। রক্তাক্ত ও অভিশপ্ত দিবসের হলিখেলা। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে যখন আলোর নিশানা দেখিয়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু, ঠিক তখনই ‘আগস্ট’ নামের অন্ধকার নেমে আসে। আগস্টের ওই রাতে একদল বিপথগামী সেনাকর্মকর্তা হত্যা করে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের সদস্যদের। কেবল তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান।
ঘাতকের বুলেট নিভিয়ে দিয়েছে ‘স্বাধীনতার সূর্য’ বঙ্গবন্ধু নামের প্রদীপ। এখানে সূর্য ওঠে রোজ রোজ। নতুনের কেতন উড়িয়ে মানুষ স্বপ্ন জয়ের প্রত্যয়ে এগিয়েও চলে নিত্যদিন। তবুও সে স্বপ্নে অপূর্ণতা রয়ে যায়। সে অপূর্ণতা যেন শুধু্ই স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে হারানোর।