শেষ চার উইকেটই ‘কাটারে’ নিয়েছি : মাশরাফি

:
: ৬ years ago

আজ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে কী এমন বোলিং করেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস? ভাবছেন বলে নিশ্চয়ই আগুন বা বারুদ মেশানো ছিল। তা না হলে কি আর ২৩ বলে অগ্রণী ব্যাংকের ছয়-ছয়জন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরত যেতেন?

খেলা না দেখা সবাই নিশ্চয়ই তাই মনে করছেন। সবার ধারণা, মাশরাফির বলে এমন গতি আর সুইং ছিল যে অগ্রণী ব্যাংকের শেষ চার ব্যাটসম্যান ধীমান ঘোষ, আব্দুর রাজ্জাক, শফিউল ইসলাম আর ফজলে রাব্বি না বুঝে অসহায়ের মতো আউট হয়েছেন।

আসলে তা নয়। শেষ ওভারে অগ্রণী ব্যাংকের দরকার ছিল ১৩ রানের। ক্রিজে ছিলেন ধীমান ঘোষ আর আব্দুর রাজ্জাক। মাশরাফি খুব ভালো করেই জানতেন, তাদের রানের তাড়া আছে। তারা রানের তালাশে ব্যাট ছুড়বেনই।

তখন কী মনে হচ্ছিল? আর মাশরাফি আসলে কী চিন্তা করে ও ভেবে কেমন বোলিং করেছেন? নিশ্চয়ই তা জানতে ইচ্ছে করছে? সেটা মাশরাফির মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘আমি যখন আসি, তখন ওদের (অগ্রণী ব্যাংকের) ওভারপিছু প্রায় আট-সাড়ে আট করে রান দরকার ছিল। তখন ওদের মারতে হইতোই। ওই চাপটা ওরা নিতে পারেনি। চাপটা আমার ওপরও ছিল। আমাদের পেস বোলার বারবার ইনজুরি হয়ে যাচ্ছে, এটাও আমার মাথায় ছিল। ভাগ্যক্রমে জায়গামতো বল করে যেতে পেরেছিলাম।’

আপনার প্ল্যানটা কী ছিল? মাশরাফির বুক চিতানো জবাব, ‘প্রতিপক্ষ যেই থাকুক আমি সবসময় আমার শক্তির জায়গা থেকেই বোলিং করি। আমি কাটারই ছুড়ছিলাম। দুই-একটা হয়তো ক্রস সিমে করেছি। ইয়র্কার করার চেষ্টা করিনি। রাজের বিপক্ষে ইয়র্কার ছুড়তে গিয়ে চার খেয়েছি। তাই আর ওই পথে হাঁটিনি। আমি মিডঅফ ওপরে রেখে কাটার মেরে বোলিং করেছি।’

১০০+ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা শাহরিয়ার নাফীস একাই প্রায় খেলা ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন। শতরান পূর্ণ করা বাঁহাতি শাহরিয়ার নাফীসের আউটটাকেই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট মনে করেন মাশরাফি। তার মূল্যায়ন, শাহরিয়ার নাফীস ভালো খেলছিল। ওই সময় ওর উইকেটটা খুব প্রয়োজন ছিল। উইকেটটা নেয়ার জন্যই বলটা করেছি।’

শেষ ওভারে বোলিং করার সময় কী মনে হচ্ছিল? মাশরাফি অকপটে স্বীকার করলেন, এমন পরিস্থিতিতে বোলারদের ওপর অনেক চাপ থাকে। মাথায় নানামুখী চিন্তাও ভর করে। তাইতো মুখে এমন এক কথা, ‘ধরেন থার্ডম্যান ওপরে রেখেছেন। কিন্তু কাঞ্চিতে (ব্যাটের কানায়) লেগে চার হয়ে গেলে চাপ বেড়ে যাবে। এসব বাজে চিন্তাও কিন্তু আসে। এসব ক্ষেত্রে শুধু ভালো বোলিং করলেও হয় না। ভাগ্যটা পক্ষে আসতে হয়। কেননা যেকোনো সময় কাঞ্চিতে লেগে চার হয়ে যেতে পারে। তখন কিছু করার থাকে না। এজন্য এইসব নেতিবাচক চিন্তা না করে উচিত নিজের শক্তির জায়গা মেনেই বোলিং করা। আমার মাথায় নেতিবাচক চিন্তা আসছিল। একবার ভেবেছি থার্ডম্যান পেছনে নেব নাকি? তারপরও ওপরে রেখেই বোলিং করেছি। যদি হয়ে যায় কিছু করার নাই।’

মাশরাফির অনুভব, ‘সেট ব্যাটসম্যান থাকলে জিতে যেতে পারতো অগ্রণী ব্যাংক। শেষ ওভারে ১৩ রান লাগতো। একটা শট বেরিয়ে গেলেই তো চার হয়ে যেত। রাজ্জাক ছিল জানতাম ব্যাটে লাগলে বেরিয়ে যাবে। ওর ব্যাটেও বল লাগছিল।’

তার শেষ কথা, ‘পুরনো বলে আমার আসল শক্তির জায়গা হলো কাটার। আমি আজকেও সেটা ট্রাই করেছি। শেষের চারটা উইকেটই কাটারে নিয়েছি। বল ড্রাইভিং জোনের একটু পেছনে ফেলার চেষ্টা ছিল। শেষ কথাটি উহ্য থেকে গেছে। তাহলো, তারা মারতে গিয়েও মাঝব্যাটে আনতে পারেনি।’

আর তাই শেষ ৬ বলে ১৩ রান দরকার থাকা অবস্থায় মাশরাফিকে তুলে মারতে গিয়ে প্রথমে ধীমান ঘোষ স্লাগ করতে গিয়ে আকাশে তুলে আউট। পরের বলে ডিপমিড উইকেটে ক্যাচ রাজ্জাক। আর হ্যাটট্রিকের শিকার শফিউল ধরা খেলেন স্কোয়ার লেগে। শেষ ওভারের চার নম্বর শিকার ফজলে রাব্বিও কাটারে স্লাগ করতে গিয়ে আকাশে তুলে বিদায় নিলেন।

ক্যারিয়ারে আগে কখনই হ্যাটট্রিক ছিল না। আজ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে প্রথম হ্যাটট্রিকের পর যথারীতি নির্বিকার মাশরাফি। অনুভূতি ব্যক্ত করতে তাই এমন অভিব্যক্তি, ‘হ্যাটট্রিকতো করেছি। সত্যি কথা বলতে ওই অনুভূতিটা নেই। ম্যাচ জিততে পেরেছি সেটাই ভালো লাগছে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতেই আমাদের দলে পেস বোলিংয়ে কিছুটা ঘাটতি আছে। গত ম্যাচটা আমরা এই কারণেই হেরেছিলাম। আজকে আমরা বোলিংয়ের জন্য হেরে যাচ্ছিলাম। এবার জিততে পেরে ভালো লাগছে।’