বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অবসান হচ্ছে খুলনা থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ২১৫ কিলোমিটার নৌপথের ফেরি বিড়ম্বনা।
রোববার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হচ্ছে (০৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা ০১ মিনিট থেকে।
এদিকে কঁচা নদীর বেকুটিয়া ফেরিঘাটে দুটি ফেরি চলাচল করছে। দুই ফেরিতে ২৫ জন স্টাফের শেষ কর্মদিবস আজ রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে শেষ কর্মদিবসেও ব্যস্ততার শেষ নেই তাদের। অতিথিদের গাড়ি ও শেষবারের মতো পারাপারকারী বিভিন্ন যানবাহনই মূলত তাদের চাপের কারণ। জীবনের অনেকগুলো বছর কাটিয়েছেন এই ফেরি সার্ভিসে। তবুও এতটুকু ক্ষোভ নেই তাদের। বরং সেতু উদ্বোধনকে স্বাগত জানিয়ে খুশিতে আত্মহারা তারা।
৪০ বছর ধরে ফেরি চালাচ্ছেন মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমি আজ ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ফেরি বিভাগের আওতায় বিভিন্ন ঘাটে ফেরি চালিয়েছি। বেশির ভাগ জায়গায় সেতু হওয়ায় ফেরি বন্ধ হয়ে গেছে। আমি পটুয়াখালী, লেবুখালী, দপদপিয়া, গাবখান, ষাটপাকিয়াতে ফেরি চালিয়েছি। সর্বশেষ এই বেকুটিয়ায় ফেরি চালাচ্ছি। আবারো কর্মস্থল পরিবর্তন হচ্ছে। ভালো লাগছে। আবারো ফেরিচালক হিসেবে কর্মস্থল পরিবর্তন হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে আল্লাহ ভালো রাখুক। তিনি যেভাবে দেশের উন্নয়ন করছেন, তাতে এই ধারা অব্যাহত থাকুক। আমাকে চরখালী ফেরিতে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। সেখানে কয়েক দিনের মধ্যেই যোগদান করব।
আরেক ফেরিচালক মো. ওয়াদুদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে ফেরি চালাই। এই পয়েন্টে ফেরি চলাচল শেষ হচ্ছে আজ। সেতু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের অনেক উপকার হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেকুটিয়া পয়েন্টে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ বছর ‘চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় ‘চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ রিকোনিসেন্স ডিজাইন ইনস্টিটিউট’ এই সেতু নির্মাণ করেছে। গত ৭ আগস্ট চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর উপস্থিতিতে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ইকনোমি মিনিস্টার বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর করেন।
এছাড়া প্রায় এক কিলোমিটার মূল সেতুর উভয় প্রান্তে ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্টসহ সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ মিটার। ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিলার বিশিষ্ট ১৩.৪০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর পিরোজপুর ও বরিশাল প্রান্তে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়কসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্বিঘ্নে রাখতে আরও ২টি ছোট সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। বাকি ২৪৪ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ। সেতুটি ১০টি পিলার এবং ৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি বক্স গার্ডার টাইপের সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার এবং অ্যাপ্রোচ সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৯৫ মিটার। এছাড়া সেতুর দুই পাড়ে রয়েছে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক।